খেলাধুলা ডেস্ক:
পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৪ করা দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেট তুলে নিয়ে উড়ন্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৭৯ রানের জুটিতে প্রোটিয়াদের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি এনে দিয়েছেন হেইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। অবশ্য তাতে অবদান ছিল উইকেটের পেছনে থাকা লিটন কুমার দাসের। মিলার ১৩ রানে থাকাবস্থায় তার সেই ক্যাচ ছাড়ার মাশুল দিতে হয়েছে টাইগারদের। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে প্রোটিয়াদের সংগ্রহ ১১৩ রান। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সংস্করণে আফ্রিকানদের সর্বনিম্ন পুঁজি।
নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে ১১০ পেরোনো পুঁজি কতটা কঠিন হতে পারে সেটি দেখা গিয়েছিল গতকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকাও প্রথম দুই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে যথাক্রমে ৭৫ ও ১০৩ রান পেরোতে হিমশিম খেয়েছিল। সে হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। সেই পুঁজি অবশ্য আরও বড় হতে পারত, মুস্তাফিজুর রহমান শেষ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৪ রান।
এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বনিম্ন পুঁজি ছিল ১৪৮ রানের। মিরপুরে ম্যাচটি হয়েছিল ২০১৫ সালে, দ্বিপাক্ষিক সিরিজে। যদিও দুই দলের মুখোমুখি দেখায় সর্বনিম্ন রান করার লজ্জার রেকর্ডটি বাংলাদেশের দখলে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দু’বার একশ’র নিচে অলআউট হয়েছিল। দুই দলের দেখায় টাইগারদের সর্বনিম্ন তিনটি পুঁজি যথাক্রমে ৮৪, ৯৬ ও ১০১ রান।
নিউইয়র্কে আজ টস জিতে সবাইকে চমকে দিয়ে আগে ব্যাটিং নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। তার সেই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে একের পর উইকেট নিয়ে নাস্তানাবুদ করেছেন তানজিম সাকিব ও তাসকিনরা। প্রথম ওভারের শেষ বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে প্রোটিয়া ওপেনার রেজা হেনড্রিকসকে (০) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তানজিম সাকিব। তরুণ এই পেসার শুরুতেই দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন। নিজের কোটার দ্বিতীয় তথা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে আবারও সাফল্য পান তানজিম। সরাসরি স্টাম্প ভাঙলেন পুল শট খেলতে যাওয়া কুইন্টন ডি ককের (১৮)। টাইগার পেসারের জোড়া আঘাতে শুরুতেই বিপাকে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর তানজিমের দলে যোগ দেন তাসকিনও।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে ফর্ম খুঁজে ফেরা প্রোটিয়া অধিনায়ক মার্করামের (৪) স্টাম্প ভেঙেছেন তাসকিন। ডেলিভারিটি ছিল সিম আপ, দারুণ লেংথ আর লাইন। যাতে ব্যাট চালিয়ে নাগাল পাননি আফ্রিকান দলপতি। বাংলাদেশকে শুরুতেই দারুণ মোমেন্টাম এনে দেওয়া তানজিম নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ের দাপট অব্যাহত রাখলেন। এবার তুলে নিলেন আগ্রাসী ব্যাটার ত্রিস্তান স্টাবসকে (০)। প্রোটিয়া ব্যাটার আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন কাভারে থাকা সাকিব আল হাসানকে।
আগের দুই ম্যাচেও দ্রুততম সময়ে চার উইকেট হারিয়েছিল ডি কক-মার্করামরা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সর্বশেষ দুই ম্যাচসহ এ নিয়ে চতুর্থবার ২৩ বা এর কম রানে ৪ উইকেট হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এমন বিপর্যয়ের পরও পঞ্চম উইকেট জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন মিলার-ক্লাসেন। দুজনের জুটিতে এসেছে ৭৯ রান, এর আগে টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পঞ্চম জুটিতে সর্বোচ্চ রান ছিল ৭৭। আজকের রেকর্ডগড়া জুটিতে তারা চ্যালেঞ্জিং পুঁজিও গড়ে ফেলে।
যদিও একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল ম্যাচের আগে মার্করামের বলা কাঙ্ক্ষিত ১৩০ বা এর আশেপাশের স্কোর করে ফেলবে প্রোটিয়ারা। কিন্তু তাসকিনের বলে ক্লাসেন আর ১৯তম ওভারে রিশাদের বলে মিলার বোল্ড হওয়াতে দক্ষিণ আফ্রিকা আটকে গেছে আগেভাগেই। ক্লাসেন ৪৪ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ রান এবং মিলার ৩৮ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ২৯ রান করেন। শেষ ওভারে প্রথম চার বলই ডট দিয়েছেন মুস্তাফিজ। ফলে প্রোটিয়াদের পুঁজি তুলনামূলক কমই হয়েছে বলা চলে।
বাংলাদেশের হয়ে মাত্র ১৮ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তানজিম সাকিব। এ ছাড়া তাসকিন ১৯ রানে ২টি এবং ৩৩ রানে ১ উইকেট নেন তাসকিন। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়েছেন ফিজ।