জেলা প্রতিনিধি,নাটোরঃ
এমপির হুঙ্কার, ইউএনও’র দেওয়া জেল-জরিমানা। কোনো পদক্ষেপেই থামানো যাচ্ছে না রাক্ষুসে মাটি খাদকদের। কৌশল বদলে রাতের দ্বিতীয় প্রহরে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর বানানো হচ্ছে। মহামারী আকার ধারণ করায় পুকুর খনন রোধে মাইকিং দিয়েছেন ইউএনও।বুধবার (১৫ মে) সকাল থেকে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী র্কর্মকর্তা সালমা আক্তারের দেওয়া ওই প্রচার মাইকিং চালু করা হয়।
নির্বাহী কর্মকর্তার জারি করা ওই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর ১৩ ধারা মোতাবেক ‘মাটির উপরি-স্তর কর্তন ও ভরাটের দণ্ডের কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়- ‘যদি কোন ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিরেকে আবাদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমির উপরিস্তর কর্তন, জমির রেকর্ডীয় মালিকের বিনা অনুমতিতে বালু, মাটি দ্বারা ভরাট এবং অনুরূপ কাজ অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এই অপরাধে অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে’। উপজেলাবাসীকে এই আইনের প্রতি দায়িত্বশীল থাকার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধও জানানো হয়েছে।
সালমা আক্তার বলেন, গুরুদাসপুরে ফসলি জমিতে পুকুর খনন একশ্রেণির মানুষের নেশা-পেশায় পরিণত হয়েছে। এসব মাটি খেকোদের হাত থেকে ফসলি জমি রক্ষায় তিনি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য মাইকিং দিয়েছেন। একইসঙ্গে জরুরি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছেন।স্থানীয়রা জানান, বিলের তলানি থেকে পাকা সড়কের ধার। কোনো জমিই বাদ যায়নি রাক্ষুসে মাটি খাদকদের হাত থেকে। বিলের এসব তিন ফসলি জমি নির্বিচারে কেটে পুকুর বানানো হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা, কুমারখালী, চাকলের বিলের যতদূর চোখ যায় একটার পর একটা পুকুর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে এবং নেতা-কর্মীদের নাম ভাঙিয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র কৃষকের ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে চলেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিদ্দকুর রহমান পাটোয়ারী পুকুর খনন বন্ধে সোচ্চার হলেও তার আশেপাশের নেতা-কর্মীরাই এই অপরাধের সঙ্গে বেশি জড়িত। তাছাড়া পুকুর খননবন্ধে থানা প্রশাসনেরও অসহযোগিতা রয়েছে।
গুরুদাসপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, এভাবে পুকুর খননের ফলে গত ১৩ বছরে গুরুদাসপুর উপজেলায় ফসলি জমি কমেছে ১ হাজার ৫১০ হেক্টর। ২০১১ সালে গুরুদাসপুরে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৬০৯ হেক্টর। এই জমি চলতি বছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার হেক্টরে।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ জানান, এভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করায় মারাত্মক ফসল হানি হচ্ছে। নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নির্বিচারে পুকুর খনন করায় প্রতি বছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ছালমা আক্তার বলেন, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, চাটমোহর, বড়াইগ্রাম এবং সিংড়া উপজেলা চলনবিলের পেটে গড়ে উঠেছে। বিলে পুকুর খনন করায় ফসলি জমি কমে যাওয়ার পাশাপাশি মারাত্মকভাবে চলনবিলের সৌন্দর্য্য হানি হচ্ছে। এ কারণে পুকুর খনন বন্ধে তিনি সব ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছেন।নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, পুকুর খননকারীরা কোনো দলের হতে পারে না। পুকুর খনন বন্ধে তিনি সবার সহযোগিতা চান।