ফেনী প্রতিনিধি:
ফেনীর সোনাগাজীতে ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দেওয়া নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে উপজেলা ছাত্রদলের দুই গ্রুপ। বুধবার সন্ধ্যায় পৌরসভার জিরো পয়েন্ট থেকে তাকিয়া রোড় এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ নেতাকর্মী। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে উভয় পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ, ছাত্রদল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে সোনাগাজী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিরাজ ও রায়হান নামে দুই ছাত্রদল কর্মী সংঘর্ষে জড়ায়। ঘটনার জন্য কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওসমান গনি জিহাদ উপজেলা ছাত্রদল নেতা পিয়াসের অনুসারী ওমরকে দায়ী করেন। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভার জিরো পয়েন্টে পৌর, কলেজ ও উপজেলা ছাত্রদলের ব্যানারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভুঞা হামলাকারী ওমরকে ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করে তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য ছাত্রদলের কয়েক নেতাকে দায়ী করে ফের হামলার চেষ্টা হলে ধরে এনে জিরো পয়েন্টে পিটানোর ঘোষণা দেন। রাতে আহত ছাত্রদল কর্মী রায়হান বাদী হয়ে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন পিয়াসসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় মামলার প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নুর ও উপজেলা ছাত্রদল নেতা পিয়াসের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল জিরো পয়েন্টে থেকে পশ্চিম বাজারে দিকে যেতে থাকে। মিছিলটি তাকিয়া সড়কের মাথায় পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষ লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্র ইটপাটকেল নিয়ে একে অপরের প্রতি ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে সেনা সদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলায় আহত উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শাহীন, কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব জিহাদ ভূঁইয়া, উপজেলা ছাত্রদল নেতা দাউদুল ইসলাম, এনায়েত উল্যাহ, আজিজুল হক, কামরুল ইসলাম, আবু ইউছুফ, রাইসুল ইসলামসহ কয়েকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেতা মিরাজ ও রায়হানের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদল নেতাদের অন্য গ্রুপের ওপর হামলা করেছে। এতে ছাত্রদলের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নুর বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে মঙ্গলবার তারা প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে উত্তেজনা তৈরি করে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমরা প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মিছিল শুরু করলে কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওসমান গনি জিহাদ বলেন, তারা দুই দিন আগে আমাদের দুই কর্মীকে পিটিয়ে আহত করার পর আজকে ফের মিছিল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের আটকের বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।