ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করেছে বিএনপি

প্রকাশিত: ১২:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যিনি ১৯৬৩ সালে ছাত্র রাজনীতিতে জড়ান। বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে করেছেন শিক্ষকতাও। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি, বিএনপির অবস্থান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যক্তিগত প্রত্যাশা, রাজনৈতিক কষ্ট ও অবসর জীবন নিয়ে একান্ত আলাপচারিতায় কথা বলেছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, নতুন শক্তির অভ্যুদয়কে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াইকে অস্বীকার করলে সংকট হবে। ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের সমস্ত ভিত্তি তৈরি করেছে বিএনপি। তিনি চান, সত্যিকার এক লিবারেল ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ। এর জন্য দরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তার দাবি, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়া উচিত।

গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান। সাক্ষাত্কারটি প্রশ্ন-উত্তর পর্বে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: বিএনপি বাংলাদেশের অন্যতম বড় দল। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে প্রথমে দল নিয়ে আপনার আশা-প্রত্যাশা ও শঙ্কার কথা জানতে চাই।

উত্তর: গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি। দেশে মৌলিক কিছু পরিবর্তন হবে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতান্ত্রিক ধারায় পরিবর্তনটা চাই। প্রফেসর ইউনূসের ক্যাবিনেটের কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা সবচেয়ে বেশি। প্রফেসরসহ যারা ক্যাবিনেটে রয়েছেন, তারা বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ মানুষ। তারা দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একটি পার্লামেন্ট তৈরি হবে। শঙ্কার জায়গাটা হলো, যদি এমনটা না হয় তাহলে মানুষের প্রত্যাশা, আত্মত্যাগ ও রক্তপাত; সব বৃথা যাবে।

প্রশ্ন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির দূরত্বের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আবার জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি কেন ঘটল?

উত্তর: ২০১২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সময়ে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট দাবিতে আমরা আন্দোলন করে আসছি। এরপর ছিল ডেমোক্রেসি নিয়ে আন্দোলন। আন্দোলনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আমরা বিভিন্ন কৌশল নিয়েছি। শুরুতে আমরা ২০ দল ভেঙে দিয়েছিলাম। তখন জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট ভেঙে গেল। কিন্তু, আমাদের যোগাযোগটা অক্ষুণ্ন ছিল। আন্দোলনটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করি। সেখানে ডাব-বাম সবাই এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। পরবর্তীকালে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলনটা করেছে, সেই আন্দোলনে কিন্তু কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল কোটার পক্ষের আন্দোলন। এটা পরে টার্ন ইন্টু অ্যান্টি গভর্নমেন্ট। এই আন্দোলনটা দানা বেধেছে শেষের কয়েকটা দিন। তিন আগস্ট তারা সরকার পতনের এক দফার ঘোষণা দেয়। তিন থেকে পাঁচের মধ্যে আন্দোলনটা চূড়ান্ত পর্যায়ে গেছে। এই যে চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়া, এটা তো একদিনে হয়নি। এটা দীর্ঘ আন্দোলনের ফলাফল।

ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরে আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং ও ৭০০-এর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। আমাদের চেয়ারপারসনকে মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়েছে। অ্যাকটিং চেয়ারম্যান দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমাদের এমন একজন নেতা নেই, যাদের বিরুদ্ধে ৪০, ৫০, ৬০টা মামলা নেই। কিন্তু, এই জিনিসটাকে কিন্তু সবাই এখন উপেক্ষা করছে। এটাকে কেউ রিকগনাইস করছে না। এই ব্যাপারটা আমাদের খুব কষ্ট দিচ্ছে। আপনি যেটা বলছেন, এই জায়গায় আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু, আমার মনে হয় আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর অভার রয়েছে। তাদের বুঝতে হবে আমরা আন্দোলন করে এই পর্যায়ে এসেছি। আমরাও বুঝি খুব ভালো করে। আপনি দেখবেন, আমরা এই সরকারের কোনো কথা বলছি না।

৭২-এর সংবিধান তো একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে। তারপরও সেটা কিন্তু এখন আর আগের মতো নেই। চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখন সংবিধানে যেটা সমস্যা দাঁড়িয়েছে, এই সংবিধানের তিনটা অনুচ্ছেদ এবং অন্য কতগুলো পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, যেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। সেসব পরিবর্তন করার জন্য আমরা সুপারিশ দিয়েছি সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে। কমিশন রিপোর্টটা দিক আগে। সরকার প্লেস করুক। তারপর আমরা সেটা নিয়ে কথা বলব। হঠাৎ করে বললেন, কাল সংবিধান বাতিল করতে হবে, কেন?

প্রশ্ন: সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না?

উত্তর: আমরা একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। আমাদের অনেকভাবে চিন্তা করতে হয়। যাদের সঙ্গে আমরা যুগপৎভাবে আন্দোলন করেছি, তাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় রয়েছে। ফলে, এগুলো একটু ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করে তারপর ঠিক করতে হবে। এই সরকার যে দেশ চালাচ্ছে, আমরা তো এখনো বুঝতে পারছি না, তারা কী চাচ্ছে। সরকারের উপদেষ্টাদের একেক জন একেক রকম কথা বলছে। এভাবে তো হয় না। আমরা এত বড় কাজে হাত দিয়েছি, এই কাজটা কিন্তু একে অপরের সহযোগিতা ও আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। শত্রু বাড়ালে তো হবে না। ভাবখানা এরকম, বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় শত্রু। বিএনপি অবশ্যই দাবি করতে পারে, এই ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের সমস্ত ভিত্তি বিএনপি তৈরি করেছে। আমরা ছাত্রদের সবসময় স্বাগত জানিয়েছি। তাদের আত্মত্যাগ রয়েছে। এখানে আমাদের ছেলেরাও তো মারা গেছে। সাধারণ মানুষ মারা গেছে। এটা তো একটা সার্বজনিন ব্যাপার ছিল। সেক্ষেত্রে, যদি দাবি করা হয়, এটা শুধু তাইরাই করেছে; তাহলে তো হবে না। এই আন্দোলন তো সবাই মিলে করেছি। এই জিনিসগুলোকে মেনে নিতে হবে। সরকারের সুযোগ নিয়ে অনেক কিছু করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল তৈরি করা হচ্ছে, ভালো কথা, আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। কিন্তু সরকারে থেকে কেন?

প্রশ্ন: সরকারের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণা কিন্তু দেওয়া হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করবে।

উত্তর: প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু দায়িত্ব নিয়েছেন, সেহেতু তাকে সব দলকে চিঠি পাঠাতে হবে। আলোচনা করতে হবে। আলোচনা ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব না।

প্রশ্ন: আমরা শুনলাম, এ ঘোষণার আগে আপনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। আপনাদের মধ্যে কী নিয়ে কথা হয়েছে?

উত্তর: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কী কথা হয়েছে, সেটা তো আপনাকে বলব না। তবে, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তারপরেই কিন্তু সরকারের প্রেস সেক্রেটারি স্টেটমেন্ট দিয়েছে, ছাত্রদের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বা নাগরিক কমিটির সঙ্গে আপনারা কেন ডায়ালগ করছেন না?

উত্তর: এখন পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গে কোনো প্রস্তাব দেয়নি ডায়ালগ করার জন্য। তারা এসেছে, কথা বলেছে কয়েক বার। কিন্তু, তারা বলেনি, রাজনৈতিক দল গঠন করবে। আমরা তো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে আমাদের ফরমালি কোনো কথা হয়নি। তবে, তাদের সঙ্গে সব সময় আলোচনা হয়।

প্রশ্ন: জামায়াতের সঙ্গে কি দূরত্ব বাড়ছে?

উত্তর: জামায়াতের সঙ্গে আমাদের নৈকট্য বা দূরত্ব যা কিছু ছিল, এর আগে; যখন অ্যালাইন্স ছিল। ওটা তো আমরা আগেই ভেঙে দিয়েছি। ফলে, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের নৈকট্য বা দূরত্ব ঐভাবে ইস্যু না। তারা তাদের রাজনীতির মতো কথা বলছে। আমাদের ছেলেরা যদি কেউ কিছু বলে থাকে, তারা তাদের মতো কথা বলছে।

প্রশ্ন: রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। আপনার ভাবনা কী?

উত্তর: ব্যাপারটা হচ্ছে, যখন একটা পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে এই ধরনের একটা গণঅভ্যুত্থান ঘটে, বাংলাদেশের ইতিহাস তো অনেক। আমাদের অনেক বয়স হয়েছে। এমন একটা পরিবর্তনের পরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি, এই ইতিহাস আপনি পাবেন না। কিছু মানুষ দলের নাম ভাঙিয়ে এগুলো করেছে। কিন্তু, যেখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, আমরা খবর পাচ্ছি; ব্যবস্থা নিয়েছি। এই ধরনের ঘটনা এখন অনেক কমে এসেছে।

প্রশ্ন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ একটি পক্ষ সংস্কার শেষে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে যৌক্তিক সংস্কার শেষে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী হতে পারে। এছাড়া বিএনপি কবে নাগাদ নির্বাচন চায়?

উত্তর: সংস্কারের প্রস্তাব তো আমাদের। ২০১৬ সালে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দেয়। এখন যে সংস্কারের কথা আসছে, তার প্রত্যেকটা রয়েছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য। দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, এর সবই আছে। এরপর আবার ২০২২ সালে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দীর্ঘ দুই বছর এটার ওপর কাজ করে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। যেটা সংস্কার। রাষ্ট্রের পরিবর্তনের রূপরেখা। এখন যারা বলছে, আমরা সংস্কার চায় না; তারা ওই ক্যাম্পেইনটা করছে বিএনপিকে একেবারে ম্লান করার জন্য। আমরা সংস্কার চাই। তবে সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তো অসুবিধা নেই।

প্রশ্ন: সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে কত সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন আপনি?

উত্তর: সংস্কার করতে এখন থেকে ছয় মাসের বেশি লাগা উচিত না। এখানে একটা বেসিক প্রশ্ন রয়েছে। সংস্কার যে করবেন, ইমপ্লিমেন্ট করবেন কীভাবে? ধরেন, আমরা সংবিধানের একটি জায়গায় সবাই একমত হলাম, এটা পরিবর্তন করা দরকার। এটা ইমপ্লিমেন্ট কে করবে? তার জন্য তো পার্লামেন্ট লাগবে আপনার। এর জন্য তো ইলেকশন লাগবে। সেটাই আমরা বলছি। ইলেকশন হলে সংসদ থেকে সংস্কারগুলো দ্রুত হবে। তার আগে নির্বাচনের জন্য যেটা দরকার, সেটা করেন। প্রশাসনের জন্য যেটা দরকার, সেটা করেন। জুডিশিয়ারি কিছুটা হয়েছে, আরো হোক। এসব করতে খুব বেশি দিন না, এখন থেকে ছয় মাসের বেশি লাগাই উচিত না।

প্রশ্ন: ইলেকশন তাহলে কবে নাগাদ হলে ভালো হয়? আপনারা কী চান?

উত্তর: আমরা তো বলছি, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন হলে ভালো হয়। ২৫ এর ডিসেম্বরে ইলেকশন শেষ হয়ে যাওয়া উচিত।

প্রশ্ন: জাতীয় নাগরিক কমিটি বলেছে, শেখ হাসিনার বিচার না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। সেক্ষেত্রে আপনাদের বক্তব্য কী? আর আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে আসে তাহলে আপনাদের দলীয় অবস্থা কী হবে?

উত্তর: আমরা আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, সেটা আওয়ামী পার্টির সিদ্ধান্ত। আর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না, এই সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে। দল হিসেবে আমরা আমাদের কোনো মত দিচ্ছি না। শেখ হাসিনার বিচার না হলে তারা নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, এটা তাদের ব্যাপার। আর শেখ হাসিনার বিচার তো হতেই হবে। সেটা কতদিন লাগবে কি লাগবে না, সেটা সরকার বলতে পারবে, বিচার বিভাগ বলতে পারবে। আমি মনে করি না, সেজন্য নির্বাচন আটকে থাকার সুযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন: বিএনপি দীর্ঘদিন বলে আসছে, নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন করবে। সেখানে জামায়াত থাকবে?

উত্তর: জাতীয় সরকার গঠন করব, এটা আমাদের ঘোষণা। আমরা জাতীয় সরকারটা কেন করতে চাই? আমরা রাষ্ট্রের মৌলিক পরিবর্তনের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে চাই। এগুলো মেজর চেঞ্জেস। এগুলো হয়তো আমরা একা করতে পারব না। সেজন্য, আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিল, তাদের নিয়ে কাজটা বাস্তবায়ন করতে চাই। জামায়াত ইসলাম তো আমাদের ঐ সময় আন্দোলনে ছিল না। তারা তাদের মতো আন্দোলন করেছে। তবে, জামায়াতকে আমরা সঙ্গে নেব কি নেব না, সেই ব্যাপারে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।

প্রশ্ন: আগস্টে সরকার পতনের পর ভারতের বিরোধী অবস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি। ভারতের সঙ্গে বিএনপির কোনো বোঝাপড়া রয়েছে কি না?

উত্তর: আমরা সব সময় মনে করি, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম্য দেশ। এখানে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি করে রাজনীতি করতে হবে, এটা আমরা মনে করি না। এটা আওয়ামী লীগ করেছে, ভারতের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিদেশে আমাদের সবাই বন্ধু, কেউ প্রভু না।

প্রশ্ন: খালেদা জিয়া আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কি না?

উত্তর: বেগম খালেদা জিয়া চিকিত্সার জন্য বিদেশে যাবেন। এটা এখনো সম্ভব হয়নি এই জন্য যে, উনি এখনো অসুস্থ রয়েছেন। একবার ডেট ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু, উনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটা আবার বাতিল করা হয়। চিকিত্সকরা বলছেন, যথনই উনি যাওয়ার মতো উপযুক্ত হবেন, তখনই যাবেন।

প্রশ্ন: আর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কবে নাগাদ দেশে ফিরতে পারেন বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর: উনার কিছু কেস বাকি রয়েছে। এগুলো শেষ হয়ে গেলে তিনি দেশে আসবেন।

প্রশ্ন: এই যে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন আপনার। আগেকার দিনের রাজনীতি থেকে বর্তমান সময়ের রাজনীতি, সবকিছুর সাক্ষী আপনি। কেমন বোধ করেন?

উত্তর: এই মুহূর্তে খুবই অস্বস্তিকর। আমরা দীর্ঘ সময় লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। বারবার জেলে গেছি। পরিবারের দায়িত্ব ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারেনি। আমার বাচ্চারাও আমার কাছে থেকে ঠিকমতো সময় পায়নি। আমার প্রত্যাশা ছিল, এই যে অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পরে স্বস্তিমূলক একটি পরিবেশ তৈরি হবে। কিন্তু, আমরা দেখতে পাচ্ছি; ইচ্ছেকৃতভাবে কোনো কোনো মহল পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রশাসনের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। একটা অর্গানাইজেশনে পরিবর্তন হয়নি। কোনো কোনো স্থানে দু-চারটা পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া সবখানে আওয়ামী লীগের লোকজন এখনো বসে আছে। মানে, ফ্যাসিস্টদের কাঠামোটা পুরোপুরিভাবে থেকে গেছে। তারাই সবকিছু কন্ট্রোল করছে। এক কথায় বলতে গেলে আমি পুরোপুরি অস্বস্তির মধ্যে রয়েছি।

প্রশ্ন: আগামীর বাংলাদেশ কেমন চান আপনি?

উত্তর: আমি আগামীর বাংলাদেশকে একটি সত্যিকার লিবারেল ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি হিসেবে দেখতে চাই। যেখানে আপনি আপনার মত প্রকাশ করতে পারবেন। তার জন্য আপনাকে কোনো নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হবে না। আপনি স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবেন। আপনি লিখতে পারবেন। সব স্থানে সুবিচার প্রতিষ্ঠা হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। মোটা দাগে সব অন্ধকার কাটিয়ে আমি শান্তিময় ও ভালোবাসাময় এক বাংলাদেশ দেখতে চাই।

প্রশ্ন: আপনি অবসর নিতে চান কবে?

উত্তর: আমি এখনি অবসর নিতে চাই। কিন্তু, অবসর নেওয়ার জন্য এখন পরিস্থিতি অনুকূল নয়। আমি খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি আসলে।

প্রশ্ন: অবসরে কী করতে চান?

উত্তর: অবসরে আমি গ্রামে চলে যেতে চাই। সেখানে আমার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর দেখভাল করব। বই পড়ব, ছবি দেখব। পুরোনো বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটাব।