
সাজ্জাদ হোসেন :
সরকারি ছুটির দিন মানেই বইমেলার শিশুপ্রহর। আর শিশুপ্রহর মানেই বাচ্চাদের জন্য বিশেষ কিছু। ছুটির দিনগুলোতে শিশুপ্রহরের কারণে কোমলমতিদের পদচারণায় মুখর থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। গতবছরও শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের শিকু, ইকরি, হালুম, টুকটুকিদের সঙ্গে খুনসুটি, আনন্দে মত্ত ছিল শিশুরা। তবে এবার নেই সিসিমপুরের আয়োজন। তবুও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বই কেনাতে বেশ প্রাণোচ্ছল শিশুরা।শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলার ২২তম দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বেলা ১১টায় মেলা শুরু হওয়ায় তখন থেকেই মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।
বইমেলায় ২১ দিনে (শুক্রবার পর্যন্ত) মোট নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৩১৭টি। শুক্রবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ৩০৭টি।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল শিশুপ্রহরের জন্য। শিশু চত্বরে কিডস জোন নামে আলাদা কর্নার রয়েছে। সেখানে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে। ফলে তাদের পদচারণায় মুখর হয় মেলা প্রাঙ্গণ। তারা চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তাছাড়া লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি ও বই কেনায় মত্ত থেকে চার দেয়ালের বাইরে এসে কিছু আনন্দঘন সময় কাটিয়েছে। তবে সিসিমপুর না থাকায় শিশুদের উপস্থিতি গত বছরের তুলনায় কম ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
যদি বাংলা একাডেমি সিসিমপুরের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করত বা শিশুদের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করতে পারত শিশু কর্নারে তাহলে ভালো হতো। হয়ত সেই আকর্ষণের কারণে প্রতি সপ্তাহে ক্ষুদে দর্শনার্থীরা মেলায় আসার বায়না ধরত– এমনটাই জানালেন পাঠক-প্রকাশকরা।
এর আগে গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের পরীক্ষার জন্য শিশুপ্রহর অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে সেদিনও শিশুদের প্রাণচঞ্চলতা থেমে থাকেনি।শিশুপ্রহর আর সিসিমপুরের আসরের অংশ নিতে উত্তরা থেকে মা-বাবার সঙ্গে মেলা এসেছে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া তানজীম আহমাদ। সিসিমপুর আর শিশুপ্রহরের টানেই গত তিন বছর ধরে মেলায় আসে সে। তবে এবার সিসিমপুরের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে ভীষণ মন খারাপ তার।
ঢাকা পোস্টকে তানজীম বলে, আমি উত্তরা থেকে এসেছি। গত তিন বছর ধরে আব্বু আম্মুকে নিয়ে মেলায় আসি সিসিমপুর দেখতে। কিন্তু এ বছর সিসিমপুর নেই। আমি শিকুকে পছন্দ করি।
বই কিনেছে কি না জানতে চাইলে তানজীম বলে, এখনো বই কিনতে যাইনি। এখানে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা করব, তারপর অনেকগুলো বই কিনব। আব্বু বলেছে আমার পছন্দের বই কিনে দেবে।
তানজীমের বাবা আরমানুল হক বলেন, আমরা প্রতি বছর মেলায় আসি। বিশেষ করে গত ৩ বছর ধরে আমাদের তানজীমকে নিয়ে আসছি। মেলায় এসে সে অনেক কোয়ালিটি টাইম পার করছে। যতক্ষণ এখানে থাকি সে অনেক প্রাণোচ্ছল থাকে। এটা দেখে আমরাও তৃপ্ত হই। তবে এবার সিসিমপুর না থাকায় তার কিছুটা মন খারাপ। শিশুদের মেলামুখী করতে সিসিমপুরসহ নানা উদ্যোগগুলো চলমান রাখা উচিত।বাংলা একাডেমির মাসব্যাপী বইমেলা ও অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে ছিল শিশু-কিশোরের চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। সেখানে শিশুদের বেশ মনোযোগী হয়ে ছবি আঁকতে দেখা যায়। চিত্রাঙ্কনে অংশ নেওয়া শিশু আবির বলে, আমি ভালো ছবি আঁকতে পারি। তাই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় এসেছি। পরে সে তার মা-বাবাসহ আশপাশের সবাইকে তার আঁকা চিত্র দেখাতে থাকে।
বইমেলায় শিশুদের বই বিক্রি করা স্টল ময়ুরপঙ্খীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, শিশুরা আগে সিসিমপুরে মজা করত কিন্তু এ বছর সিসিমপুর না থাকায় তাদের আনন্দে ভাটা পড়েছে। সিসিমপুর থাকলে শিশুদের আবদারে অভিভাবকরা প্রতি সপ্তাহেই আসেন। কিন্তু এবার সেটা অনেকটাই কমেছে মনে হচ্ছে।
বই বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে আরেক বিক্রয়কর্মী বলেন, বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে সিসিমপুর থাকলে বিক্রি আরও বাড়ত।
ময়ুরপঙ্খী প্রকাশনীর ম্যানেজার চন্দনা মণ্ডল বলেন, শিশুরা মজা পায় সিসিমপুর থাকলে। শিশুদের আগমনও ঘটে অনেক বেশি। কিন্তু এবার সিসিমপুর নেই, তাই শিশুরাও একদিনের বেশি দু’দিন আসছে না। বাচ্চারা বেশি এলে শিশু কর্নার বেশ প্রাণোচ্ছল থাকে, মনে হয় বইমেলায় নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়েছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় বইমেলা শুরু হয়ে শেষ হবে রাত ৯টায়। রাত ৮টার পরে কোনো দর্শনার্থীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।