বই মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
# ড্রোন দিয়ে মনিটরিং করা মেলাপ্রাঙ্গণ
# স্ট্যান্ডবাই থাকবে সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম
# বিশেষ নজরদারিতে মেট্রোরেল-স্টেশন ও সন্দেহভাজনরা
# জঙ্গিবাদ-নাশকতা দমনে সর্বোচ্চ সতর্কতায় ডিএমপি
এসএম দেলোয়ার হোসেন:
এবার সব সংশয় কাটিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪। আগামী ১ ফেব্রæয়ারি মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে একাডেমির প্রাঙ্গণ ও উদ্যানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় নিরাপত্তা ছক তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। প্রবেশপথে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়বে মেলায় আগত দর্শনার্থী। বই মেলা ঘিরে জঙ্গিবাদ-নাশকতা রোধে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা নজরদারিও। যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে মেলাঙ্গণে স্ট্যান্ডবাই থাকবে পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। ড্রোন দিয়ে সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে পুরো মেলাঙ্গণ। আজ রোববার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এবারের বই মেলা ঘিরে বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চ তৈরির কাজের সঙ্গে চলছে স্টল নির্মাণের কাজ। একাডেমি প্রদত্ত নির্দিষ্ট ম্যাপ মেনে স্টল নির্মাণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তথ্যকেন্দ্র, বইমেলার মিডিয়া সেন্টার, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডাসহ পুরোদমে চলছে বিভিন্ন নির্মাণ কাজ।
জানা গেছে, গত বছর বই মেলার প্রস্তুতি নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলা একাডেমি। এবার সেই সমালোচনা এড়াতে বইমেলা সম্পন্ন করতে যথাযথ পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এ বছর প্রায় ৭০টি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিল। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ২১টি প্রকাশনাকে বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরেরগুলো অপরিবর্তিত থাকছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে স্টল। এবার ঢাকার ২৫টি স্কুলের শিক্ষকদের বইমেলায় আনতে নতুন করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বাংলা একাডেমি। এবার মেট্রোরেলও চালু থাকবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল নিউজ পোস্টকে বলেন, করোনার পর গত বছরের মেলা কিছুটা হলেও এলোমেলো ছিল। এবার মেলা ভালো হওয়ার আশা করছি। এর কারণ এবার বই মেলাঙ্গণের সম্পূর্ণ তদারকি করবে বাংলা একাডেমি। তাই আমাদের প্রস্তুতিও আগের তুলনায় এবার অনেক ভালো।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমি মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম নিউজ পোস্টকে বলেন, মেলার পূর্বপ্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণের জন্য ৭টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি, গত বছরের মেলায় যেসব অভিযোগ ছিল এবার তা থাকবে না। প্রকাশনা নিয়েও অস্থিরতা নেই। গত মার্চ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। এবার আমরা পুস্তক সমিতি থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সদস্য ও মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে নিয়ে বইমেলার একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। তিনি বলেন, বিগত বছরের মত এবারও মেলার অবকাঠামোগত বিন্যাস অপরিবর্তিত থাকছে। একটা গলির সামনে দাঁড়ালে এর শেষ মাথা দেখা যাবে। গুচ্ছ আকারে থাকবে না। প্যাভিলিয়ন ও স্টলের লাইন আলাদা থাকবে, যাতে স্টল খুঁজে পেতে সহজ হয়।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস্) বিপ্লব কুমার সরকার নিউজ পোস্টকে বলেন, এবারের বই মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নির্বিঘœ এবং সুশৃঙ্খল করতে গতকাল রোববার সকালে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এক সমন্বয় সভা করা হয়েছে। ওই সভায় বই মেলায় আগত বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীসহ মেলাঙ্গনের সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা ছক তৈরি করে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজনদের গতিবিধি অনুসরণে পোশাকে সাদা-পোশাকে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের ভিড়ে মিশে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা।
ওই সভায় ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বইমেলাকে ঘিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বই মেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ, চুরি-ছিনতাই, অগ্নিকাÐ এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। নতুন আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মেট্রোরেল। কারণ আমরা দেখেছি নাশকতাকারীরা মেট্রোরেলেও নাশকতা করার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, প্রত্যেক দর্শনার্থীকে আর্চওয়ে দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে হবে। বইমেলার ভিতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ ডিউটিতে নিয়োজিত থাকবে। সিসিটিভি দিয়ে মেলার ভিতরে ও চারপাশে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। নিñিদ্র নিরাপত্তা প্রদানে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, ফায়ার টেন্ডার। থাকবে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানস্থল সমূহ সুইপিং করা, সাদা পোশাকে বিশেষ টিম মোতায়েন, বিলবোর্ড, ব্যানার ও মাইকিং করে দিক-নির্দেশনা প্রদান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং, মেলাপ্রাঙ্গন ড্রোন দ্বারা মনিটরিং করা হবে এবং সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম স্ট্যান্ডবাই থাকবে।
বই মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন।
উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় চটের ওপর ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। আজ তা অমর একুশে বইমেলায় পরিণত হয়েছে। যা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।