বগুড়ায় টোলের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদলের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ

প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২৫

বগুড়া প্রতিনিধি:

 

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় কৃষিপণ্য বেচাকেনার টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল ও বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয় লোকজন। গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদীপা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে।

অভিযুক্ত যুবদল নেতার নাম শাহাদৎ হোসেন (৪২)। তিনি আড়িয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এবং আড়িয়া বাজারের ইজারাদার। আড়িয়া বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মানিকদীপা গ্রামে কৃষিপণ্য কেনাবেচা করায় সেখানে গিয়ে টোল দাবি করলে মারধরের ঘটনা ঘটে। আহত অন্যরা হলেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও বিএনপির কর্মী মুরাদ কোরাইশী, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য শহিদুল ইসলাম, বিএনপির কর্মী আনোয়ার হোসেন ও যুবদল নেতা শাহাদতের ছোট ভাই আল আমিন।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে মানিকদীপা গ্রামে ইজারাদার শাহাদৎ হোসেন ও তাঁর কয়েকজন সহযোগীকে আটকে রেখে স্থানীয় লোকজন মারধর করছেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় ও মামলা না হওয়ায় কারও বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উন্মুক্ত ডাকে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকায় আড়িয়া বাজারের ইজারা পেয়েছেন যুবদল নেতা শাহাদৎ হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল বাশারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আড়িয়া বাজার থেকে মানিকদীপা গ্রামের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে গ্রামীণ বাজার বসে। গ্রামের কৃষকেরা সারা বছর তাঁদের খেতের কৃষিপণ্য বেচাবিক্রি করেন। খবর পেয়ে শাহাদৎ হোসেন গতকাল সন্ধ্যার পর গাড়ি ও মোটরসাইকেলবহর নিয়ে ওই গ্রামে যান। এ সময় তিনি কৃষকদের থেকে আলুসহ কৃষিপণ্য বেচাবিক্রির জন্য টোল দাবি করলে স্থানীয় লোকজন বাধা দেন।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মানিকদীপা গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে কেনা চার ট্রাক আলু ঢাকায় পাঠানোর খবর পেয়ে শাহাদৎ লোকজন নিয়ে সেখানে যান। হাটের সীমানার বাইরে হলেও এক বস্তা আলুর (৬৫ কেজি) জন্য তিনি ১৫ টাকা টোল দাবি করেন। আলুর দাম সস্তা হওয়ায় এমনিতেই কৃষকেরা ক্ষুব্ধ। তার ওপর টোল দাবি করায় উত্তেজিত হয়ে জনতা শাহাদৎ ও তাঁর সহযোগীদের ওপর চড়াও হন।

অভিযোগের বিষয়ে শাহাদৎ হোসেন বলেন, এত দিন মানিকদীপা গ্রামের কৃষকেরা আড়িয়া বাজারে তাঁদের কৃষিপণ্য বিক্রি করতেন। জামায়াতের ইন্ধনে কৃষকেরা আড়িয়ায় পণ্য না এনে আড়াই কিলোমিটার দূরে মানিকদীপা বাজারে পণ্য বেচাকেনা করছিলেন। আলোচনার জন্য গতকাল গাড়ি নিয়ে সেখানে যান। তাঁর সঙ্গে আরও সাত থেকে আটজন ছিলেন। সেখানে গিয়ে আশপাশে যেকোনো হাটে কৃষিপণ্য বিক্রি করলে বস্তাপ্রতি ৮ টাকা টোল দাবি করলে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, কোনো হাটে তাঁরা পণ্য তুলবেন না এবং কাউকে টোলও দেবেন না। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, আক্কাস, সাইফুল ও তালেবের নেতৃত্বে লোকজন তাঁদের ওপর হামলা করেন এবং তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, আড়িয়া বাজার থেকে মানিকদীপার দূরত্ব তিন কিলোমিটার। হাটের নির্ধারিত সীমানার বাইরে টোল আদায় অবৈধ। ইজারাদার শাহাদৎ গাড়িবহর নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে টোলের নামে চাঁদা দাবি করেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের হুমকি দেন ও ভয়ভীতি দেখান। এ কারণে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।