নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা যৌক্তিক সংস্কারের জন্য সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাসের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবেন কোটা আন্দোলনকারীরা। এ জন্য রবিবার (১৪ জুলাই) বেলা ১১টায় বঙ্গভবন অভিমুখে পদযাত্রা করবেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি রাজনৈতিক ও পুলিশ ব্যবহার করে যৌক্তিক আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের চলমান ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিকে জনভোগান্তির কারণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যদি প্রসবযন্ত্রণা সহ্য করতে না পারেন, তাহলে পৃথিবী একটি সন্তান বিবর্জিত একটি পৃথিবী হতো। সুতরাং সুন্দর পৃথিবীর জন্য সাময়িক প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে।
কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, কোটাবৈষম্য নিরসন করে সংসদে আইন পাসের লক্ষ্যে জরুরি অধিবেশন আহ্বান ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আগামীকাল বেলা ১১টায় বঙ্গভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবো। এ সময় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ থাকবো। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা করে একই দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেবে।
কোটা আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনটিকে দমনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা যৌক্তিক দাবি জানিয়ে সরকারের করণীয় বলে আসছি। তারা আমাদের দাবি পূরণে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু সেটি না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে দমনের পরিকল্পনা করছে। তবে এ ধরনের কিছু করে থাকলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে। আমাদের দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
এর আগে আজ বিকালে ছাত্রলীগের দাবি করে বলে যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেছে। এখন যারা আছে তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।
এ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, আমাদের আন্দোলনে দিনে দিনে শিক্ষার্থীর সমাগম বাড়ছে। সুতরাং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে গেছে, এই দাবি ভিত্তিহীন। আর যেই সংগঠন এমন দাবি করছে, তারা আন্দোলনের শুরুতে ছিল না। যখন আন্দোলন সফলতার দিকে এগুলো, তখন তারা ক্রেডিট নেওয়ার জন্য বা আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়ে বিতর্কিত করতে এই ধরনের কথা বলতেছে।
সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের আন্দোলনকারীদের ওপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন হামলা করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী পুলিশ সদস্য দিয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে কুমিল্লায়। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
পুলিশের মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশ মামলা করে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে ও আমাদের দমন করতে মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে। এ সময় বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) স্পটে এক পুলিশ কর্মকর্তা ভিডিও রেকর্ড বাজান। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে দেখা যায়, না আমাদের সাজোয়াঁ যানে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীরা এর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে।
সমন্বয়ক শারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে যে ধরনের সাড়া প্রত্যাশা করেছিলাম এবং আমাদের দাবি আদায়ে যে আইনের কথা বলেছি, সেটি এখনও পাইনি।
শিক্ষকদের উদ্দেশে শারজিস আলম বলেন, আপনারা যখন যৌক্তিক দাবি নিয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছেন, তখন শিক্ষার্থীরা জোর করে ক্লাসে গিয়ে বসে থাকেনি। তারা আপনাদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে। আপনাদের দাবি পূরণ হয়ে গেলেও, আপনারাও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্লাস পরীক্ষা নেওয়ার জন্য জোর করবেন না।