চলতি বছরের প্রথম মাসেই (জানুয়ারি) দেশে ৩৪০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন আরও ৮৩৪ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৯ জন শিশু ও ৮১ জন নারী রয়েছেন। এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০৩ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বলে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটি থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশের ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় ১২২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বাসযাত্রী-৩৩, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোযাত্রী-২৮, ট্রাক ও পিক-আপ ভ্যান যাত্রী-২৪, থ্রি-হুইলার যাত্রী-১০৬ জন। যাবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ২৯ জন। দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৩১৭ জন।
এতে আরও বলা হয়েছে, এর মধ্যে আঞ্চলিক সড়কে ১৮৪টি এবং মহাসড়কে ১৫৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় দায়ী যানবাহনের সংখ্যা ৪৬৯টি। বাস-৭০, ট্রাক ও পিক-আপ-৯৭, কাভার্ড ভ্যান-১৬, লরি ও ট্রাক্টর-২৩, কার ও মাইক্রোবাস-৩৩, মোটরসাইকেল-৮৯, বাইসাইকেল-১৬, নসিমন-করিমন-আলমসাধু-মাহেন্দ্র-৮৭, সিএনজি-ইজিবাইক-৩৩, টমটম-২, পাওয়ার টিলার-১, ট্রলি-১, পুলিশ জিপ-১। এছাড়া, ১১টি রেল দুর্ঘটনায় ৯ জন এবং ৮টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৭জন নিহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে:
১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
২. বেপরোয়া গতি;
৩. চালকের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
৪. বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
৬. তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি;
১০ গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।
এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে কিছু সুপারিশও দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো হলো:
১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে;
২. চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
৩. বিআরটিএ-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করতে হবে;
৬. পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে;
৮. রেল ও নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে হবে;
৯. বারবার কমিটি গঠন এবং সুপারিশমালা তৈরির চক্র থেকে বেরিয়ে টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করতে হবে।