বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ তাদের সমর্থিত সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর একই দিনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সহিংসতা এড়াতে রাজধানী জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীর পল্টন থানাধীন গুলিস্তানে বিবি এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ গেট সংলগ্ন এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যর। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে সাঁজোয়া গাড়ি। সড়কের এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। নগরীর অধিকাংশ সড়কে এবং ঢাকায় প্রবেশের পথগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তল্লাশির কারণে সাধারণ জনগণ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঝামেলায় রাতে অনেকেই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেও বের হচ্ছেন ন। নগরীর সর্বত্রই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্যচিত্র পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, ২৩ শর্তে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপিকে মহাসমাবেশ ও বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট এলাকায় আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠনকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিএনপির মহাসমাবেশ দুপুর ২টা থেকে শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলে দলে নেতাকর্মীরা তাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগদান করছেন । অন্যদিকে দুপুর আড়াইটায় আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠনের সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুরের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম এলাকায় জড়ো হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

রাজনৈতিক দলের বৃহৎ কর্মসূচি ঘিরে যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাড়ানো হচ্ছে পুলিশের জনবলও। প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের আর্মড ভেহিক্যাল, এসকর্ট ভেহিক্যাল, সাঁজোয়া যান এপিসি ও জলকামান।

নিরাপত্তায় নিয়োজিত ও কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা নিউজ পোস্টকে জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ প্রতিটি পয়েন্টেই ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। যেখানেই নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে সেখানেই ফোর্স পাঠানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের তিনটি অঙ্গ সংগঠনের সমাবেশকে ঘিরেই মূলত নিরাপত্তা পরিকল্পনা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তবে আজ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকা, কাকরাইল মোড়, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট এলাকা, নোয়াখালী টাওয়ার এলাকা, প্রেস ক্লাব, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ, শান্তিনগর ও মৌচাক এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি সড়কে অলিগলিতে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্লোগানে স্লোগানে মুখর প্রতিটি সড়ক। সড়কের পাশে সতর্ক অবস্থায় মোতায়েন থাকতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের। দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত এসব এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর এজিবি টিম চোখে পড়ে।

বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, চার থেকে পাঁচটি পয়েন্টে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। নানা ছলে নানা অজুহাতে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন তারা। তবে দলীয় বা জোট হয়ে মিছিল নিয়ে যারা সমাবেশে আসছেন তাদের বাধা দিচ্ছে না পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ  সম্মেলনে আজ শুক্রবারের সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, আমাদের কাছে বড় ধরনের কোনো হুমকি নেই। তবে কোনো কুচক্রী মহল সমাবেশের সুযোগ নিয়ে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা নাশকতা যেন না ঘটাতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে, আনসার, এপিবিএন, র্যাব ও বিজিবি থাকবে স্ট্যান্ডবাই। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবো।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস আ্যন্ড ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন নিউজ পোস্টকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশ ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা আশঙ্কা করা হচ্ছে না। তবে বিশৃঙ্খলা মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত জননিরাপত্তা সার্বিক পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত ডেপলয়মেন্ট রয়েছে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা নজর রাখছেন। সিসি ক্যামেরা ও ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আহ্বান থাকবে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করবেন।

এদিকে রাজনৈতিক কোন নেতাকর্মী যাতে তাদের সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে রাষ্ট্রবিরোধী কোন ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন না করেন, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিতে বড় রাজনৈতিক দল দুটির নেতা কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানার ডিএমপি কমিশন খন্দকার গোলাম ফারুক। তবে যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপি কমিশনার।