বন্দুকটা নিয়ে আয়, ওকে গুলি করে মেরেই ফেলব’, বলেছিলেন কঙ্গনার বাবা

প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৪

বিনোদন ডেস্কঃ

 
পর্দার তারকা থেকে রাজনীতিবিদ—যে কারও ঘুম কেড়ে নিতে এক তিনিই যথেষ্ট। বলিউডে প্রথম ‘স্বজনপোষণ’ নিয়ে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। দিনের পর দিন তাঁর নিশানায় ছিলেন বলিউড তারকারা। তিনি কঙ্গনা রনৌত। ভারতের হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার ভম্বলায় জন্ম। মা-বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে চিকিৎসক হোক, কিন্তু কঙ্গনা নিজের পছন্দের বাইরে যেতে চাননি। তিনি পর্দার তারকাই হতে চেয়েছেন। হয়েছেনও।
মেধাবী ছাত্রী ছিলেন কঙ্গনা। মা-বাবা কঙ্গনাকে চিকিৎসক হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এটা শুনেই পড়াশোনা থেকে মন উঠে গিয়েছিল কঙ্গনার। মাধ্যমিক পাস করে কঙ্গনা চণ্ডীগড়ে যান মেডিকেলের কোচিং করতে। কোচিং করা তো দূরের কথা, নাম লেখালেন সুন্দরী প্রতিযোগিতায়। সেবার বিজয়ীর মুকুট উঠেছিল কঙ্গনার মাথায়ই। তখনই কঙ্গনা ঠিক করেন, তিনি ডাক্তারি পড়বেন না। মডেলিং করবেন। তারপর বিজয়ের মুকুট ব্যাগে পুরে বাড়ি ফিরে এলেন। বলা চলে, বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তিনি বিনোদন-দুনিয়ার টানে। আর মেয়ের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি অভিনেত্রীর বাবা। আসলে তিনি বরাবরই চেয়েছিলেন, কঙ্গনা আগে লেখাপড়া শেষ করুক। উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়েকে চণ্ডীগড়ে পাঠানোরও ইচ্ছা ছিল তাঁর।

বলিউডের সুপরিচিত লেখক, গীতিকার মনোজ মুনতাসিরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কঙ্গনা বলেন, ছেলেবেলা থেকেই বাবার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েছিলেন স্বপ্ন দেখার। কিন্তু সেই স্বপ্নই যখন এত ‘বড় হয়ে যায়’, মেনে নিতে পারেননি তিনি।

কঙ্গনা খুব অল্প বয়সে বিনোদনজগতে এসেছেন। কৈশোরে তিনি বাড়িতে জানিয়েছিলেন, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বদলে তিনি একটু আলাদাভাবে গড়তে চান ক্যারিয়ার। যেতে চান নাটক বা মডেলিং পেশায়। আর মেয়ের এই সিদ্ধান্ত কঙ্গনার বাবার কাছে ছিল বড় ধাক্কা। শুধু তা-ই নয়, আশপাশের মানুষ ও সমাজের কাছ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, তা নিয়েও পেয়েছিলেন ভয়। হিমাচলের রাজপুত পরিবারের কর্তা কঙ্গনার বাবাও রেগে গিয়ে বলে উঠেছিলেন, ‘আমার বন্দুকটা নিয়ে আয়, ওকে গুলি করে মেরেই ফেলব।’

কঙ্গনা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সিনেমার জগতে আসার সিদ্ধান্তে তাঁর বাবা তাঁকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, এর পর থেকে তিনি আর নেবেন না মেয়ের কোনো দায়িত্ব। অভিভাবক হিসেবে কোনো কাজই করবেন না। যদিও অভিনেত্রীর বিশ্বাস, তাঁর বাবার নেওয়া সেই পদক্ষেপের কারণেই তিনি আজকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন। আত্মবিশ্বাস এসেছে তাঁর মধ্যে।

এরপর সমাজের চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক প্রকৃতি যে তাঁর পরিবারেও আছে, কঙ্গনা তা-ও অকপটে বলেন সাক্ষাৎকারে। কঙ্গনার ভাষ্য, তাঁর পরিবারের সদস্যরা সুশিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও ঐতিহ্যগত বিশ্বাস পোষণ করে। এই বিশ্বাস অনুসারে, নারীর নির্দিষ্ট সীমানা বা গণ্ডি অতিক্রম করা উচিত নয় এবং সেই গণ্ডি অতিক্রম করা গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হতে পারে, যা বন্দুক প্রসঙ্গটা প্রতীকী।

পরিবারের বারণ না মেনে হাতের কাছে যা ছিল, সব নিয়ে বাড়ি থেকে সোজা চলে যান দিল্লি। সেখানে গিয়ে কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না কঙ্গনা। থিয়েটারে ভর্তি হলেন, শিখছিলেন ফরাসি ভাষাও। সেই সময় কঙ্গনার অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার রুপি ছিল। পুরো টাকা দিয়ে একটা গাউন কিনে কঙ্গনা চলে গেলেন মুম্বাই—উদ্দেশ্য বড় পর্দায় অভিনয় করা। তারপর গ্যাংস্টার ছবির জন্য অডিশন দিলেন। পেয়েও গেলেন ছবিটা। একসময় শুরু হয় কঙ্গনার জয়রথ।

প্রথম দিকেও মেয়ের সাফল্য যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না অভিনেত্রীর বাবার। তবে জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর কঙ্গনাকে নিয়ে গর্ব বোধ করেছিলেন। বর্তমানে মেয়ের সাফল্যে তিনি গর্বিত।

সামনে মুক্তির অপেক্ষায় কঙ্গনা অভিনীত ‘ইমার্জেন্সি’ সিনেমাটি। যেখানে তিনি অভিনয় করেছেন ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে। এই ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি পরিচালনা ও প্রযোজনারও দায়িত্বে আছেন।