বন্ধ হবে অতিরিক্ত শুল্ক ও জরিমানা, বাড়বে যাত্রীসেবা

প্রকাশিত: ১২:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রী ভোগান্তি কমাতে নতুন সেবা চালু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। যাকে তারা বলছেন ‘ফার্স্ট ট্র্যাক সার্ভিস’। এখন থেকে যারা অনুমোদিত পরিমাণের অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে আসবেন, অর্থাৎ ব্যাগেজ সুবিধার অতিরিক্ত শুল্ক আরোপযোগ্য মালামাল বিমানবন্দর শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে তারা নিতে পারবেন। আগে আটক করা মালামাল ছাড়ের জন্য কাস্টমস হাউজে আসতে হতো, বিচারিক কার্যক্রমের সম্মুখীন হতে হতো এবং সময়ক্ষেপণ হতো। তাদের অনেককে দালালের খপ্পরে পড়তে হতো। এখন সেই সেবা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকেই নিতে পরবেন।

ব্যাগেজের অতিরিক্ত শুল্কারোপযোগ্য পণ্য সাময়িকভাবে আটক করে শুল্ক দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। যাত্রীরা চাইলে বিমানবন্দরেই তৎক্ষণাৎ শুল্ক দিয়ে খালাস করে নিয়ে যেতে পারবেন অথবা পরবর্তী ২১ দিনের মধ্যে সেই পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করে বিমানবন্দর থেকেই খালাস নিতে পারবেন।

শাহজালালের ইতিহাসে এ ধরনের উদ্যোগ কোনোদিনই ছিল না। বরং শুল্কায়নযোগ্য পণ্যের টাকা না দিলে সেই পণ্য জব্দ করা হতো। সেটা চলে যেতে কাস্টম হাউজের বিচার শাখায়। সেই বিচার শাখাতে বিচারের মাধ্যমে পণ্যের শুল্কের পাশাপাশি বড় অঙ্কের জরিমানা হতো। অর্থাৎ জব্দ করা মালামাল পেতে গ্রাহকের অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমসের এই উদ্যোগ যাত্রীবান্ধব। এতে পণ্যের মালিক যেমন ঝামেলা এড়াতে পারবেন, তেমনি সঠিক সময়ে তিনি তার পণ্যও পাবেন।

ঢাকা কাস্টম হাউজের যুগ্ম-কমিশনার আল আমীন বলেন, কাস্টমসের ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত প্রবাসী কিংবা অন্য যাত্রীদের জন্য একটি সুসংবাদ। শুল্কায়নে পণ্যের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে না। বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। নির্ধারিত ২১ দিনের মধ্যে যখন তার টাকার সংকুলান হবে তখন তিনি তার পণ্য পাবেন। এখানে সিএন্ডএফ কিংবা কোনও ধরনের দালালের খপ্পরেও পড়তে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে একজন প্রবাসী কিংবা অন্য যাত্রী শুল্কায়নযোগ্য পণ্য নিয়ে এলে বিমানবন্দরে অনেক সময় টাকা থাকে না। তখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেই পণ্য জব্দ (ডিএম) করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে এটি বিচার শাখায় চলে যায়। এরপর তিনি যখন ওই পণ্য নিতে আসেন তখন তাকে সিএন্ডএফ এজেন্ট ধরতে হয়। পরে ওই পণ্যের সব কাগজ দাখিল করে সেটি পেতে পেতে তাকে বিচারের মাধ্যমে জরিমানা গুনতে হতো। আর এসব প্রক্রিয়ার জন্য সিএন্ডএফ এজেন্টকেও টাকা দিতে হতো। কিন্তু এখন আর সেটি করতে হবে না। তার কাছে যে জব্দের কাগজ থাকবে সেটি দেখিয়ে ২১ দিনের মধ্যে তিনি পণ্য নিতে পারবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূলত এ ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এদিকে কাস্টমসের এই সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন ব্যবসায়ী আবু বকর। তিনি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য নিয়ে এসে বাংলাদেশে বিক্রি করেন।

তিনি বলেন, ব্যাগেজ রুলসের বাইরেও তারা কিছু পণ্য নিয়ে আসেন। এগুলো কাস্টমস হলে নিয়ে এলে তাৎক্ষণিক শুল্ক পরিশোধ করে তারা বের করতে পারেন। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত শুল্কের কারণে সেই পরিমাণ টাকা না থাকলে ওই পণ্য পেতে তাদের ঘাম ঝরে যেতো। দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ শুল্ক দিয়ে পণ্যটি বের করা হলো বাজারে ওই পরিমাণ মূল্যও পাওয়া যাবে না। এতে আর্থিক ক্ষতিও হতো। এছাড়া অনেক সময় দালাল বা সিএন্ডএফের নানা রকম অপতৎপরতার কারণে অনেক সময় পণ্যও পাওয়া যেতো না।

তবে এখন এই সিদ্ধান্তটি খুবই ভালো হয়েছে। জব্দের মেমো দিয়ে নির্ধারিত শুল্ক দিয়ে সহজেই পণ্য বের করা যাবে।

আব্দুল হামিদ নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা হয়রানি থেকে বাঁচবো আশা করছি। অতিরিক্ত টাকাও দিতে হচ্ছে না, আবার জরিমানা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। সামগ্রিকভাবে আমাদের মতো যারা ব্যবসায়ী তারা লাভবান হবে। ভালো ব্যবসা করতে পারবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাগেজ রুলসের ভেতরে অনেক মালামালা নিয়ে আসা যায়। কিন্তু এর বাইরেও কিছু মালামাল আমরা নিয়ে আসি। এটা আমাদের এক ধরনের ব্যবসা।

এই মালামালগুলোর মধ্যে কসমেটিকস ও পারফিউম বেশি। অনেক সময় বেবিফুড এমনকি মোবাইলও থাকে।

তিনি বলেন, পাসপোর্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইনডোর্স করা যায়। এর বেশি করা যায় না। অনেকে হুন্ডির মাধ্যমেও টাকা পাঠায়।

তিনি বলেন, আমরা যে পন্থায় এই ব্যবসা করি তাতে সব খরচ মিলে মাসে লাখ টাকার কিছু ওপরে থাকে। যারা ভালো তারা মাসে দু’বার কিংবা তিনবারও যায়। সব মিলিয়ে কাস্টমসের এই সুবিধা শুরু হলে আমাদের ব্যবসাও আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোবারা খানম বলেন, বর্তমান সময়ে উন্নত যাত্রীসেবা দেওয়ার লক্ষ্যেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে আমাদের রাজস্ব কমবে না। রাজস্ব ঠিকই থাকবে। সেবার মানটা আরও উন্নত হবে।

তিনি বলেন, আগে যেমন তাদের সমস্যা হতো এই সমস্যা আর হবে না। আমাদের চিন্তা– সবার আগে সেবা। যাত্রীদের আর কাস্টমস হাউজে এসে সময় নষ্ট করতে হবে না। শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্য বিমানবন্দর থেকে খালাসের মাধ্যমে তাদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যাবে।