লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রায় ৭ শতাধিক পানচাষিদের দুর্দিন যাচ্ছে। ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় হাজার হাজার পানের বরজ। এতে ক্ষতি হয় কয়েক কোটি টাকা।
টানা বৃষ্টি, ভারত থেকে আশা উজানের পানিতে সম্প্রতি ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে সৃষ্ট বন্যায় রায়পুর উপজেলায় কৃষিতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পানচাষিদের। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রায়পুর উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২৫৭ হেক্টর জমিতে পানচাষ করা হয়েছে। রায়পুর পশ্চিমাঞ্চলের উত্তর চর আবাবিল, উত্তর চর বংশী, দক্ষিণ চর আবাবিল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পানচাষ হয়।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বরজগুলোতে হাঁটু পরিমাণ বন্যার পানি রয়েছে। একটি বরজে ইমান হোসেন নামের এক চাষি পঁচে যাওয়া পানের গাছ পরিষ্কার করছেন।
তিনি জানান, ১২ বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে জমিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। সেই টাকা দিয়ে দুই বছর আগে ১৫ শতক জমিতে শুরু করেন পানচাষ। দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু এবারের বন্যায় পুরো বরজ পঁচে যাওয়ায় একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। আয়ের অন্য কোনো পথ নেই তার।
পানচাষি শাহ আলম মাল বলেন, ‘পানের বরজ তৈরিতে যেমন ব্যয়সাপেক্ষ, তেমনি সময়সাপেক্ষ। এক বিঘার একটি বরজ তৈরি করতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে পানের বরজ। স্বপ্ন বুনেন সংসার ঘুছানোর। সে স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে যায় এবারের বন্যায়। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। সরকারী সহায়তা না পেলে একেবারেই পথে বসতে হবে।’
একই রকম ক্ষতির শিকার কেওড়াডগীর মোহাম্মদ আলী, পারভেজ, আনোয়ার, জাকির ও ঝাউডগীর জাকির হোসেন, মনর বেপারী, বোরান চৌকিদার, আবুল বাসার।
তারা বলেন, বন্যায় বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু পানগাছ পঁচে যায়নি, পুরো বরজ নষ্ট হয়েছে। এতে তাদের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের ঝাউডগী গ্রামের মো. জাকির হোসেন বলেন, ২০ শতাংশ জমি নিয়ে গত দুই বছর আগে পানের বরজটি তৈরি করেছিলাম। গত ১০ দিন আগে পানের বরজে বৃষ্টি ও বন্যার পানি ঢুকেছে। পানি আর বের হয়নি। পানি থাকার কারণে গাছের গোড়া পঁচে পানের বরজ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার কমপক্ষে ৪ লাখ টাকার পান নষ্ট হয়েছে।
রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম বলেন, উপজেলার ২৫৭ হেক্টর পান, ৩১৫০ হেক্টর ধান এবং ৫ হেক্টর আগাম সবজি চাষ হয়েছে। টানা বৃষ্টিও জোয়ারের পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চলগুলো তলিয়ে গেছে। পান ও রোপা আমন ধান, আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের উপ-কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী সাপ্তাহে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বীজ বিতরণ করা হবে।