নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার পানি নেমে গেলেও রেখে গেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দেশের বিভিন্ন স্থানে কন্যায় সড়ক ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ-
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ পাকা সড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ১৪টি সড়কের প্রায় ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। চরম দুর্ভোগে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন সড়কে একাধিক স্থানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পিচ ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে ৫-১০ ফুট সমপরিমাণ মাটি সরে গেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কমলগঞ্জ ভায়া কুরমা ও ইসলামপুর ভায়া মাধবপুর পাকা সড়ক। ঐ দুইটি রাস্তায় প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। ব্যাপক ভাঙনে গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কগুলোর বেহাল। চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় স্থানীয়রা পড়েছেন মহাদুর্ভোগে। অসুস্থ, শিক্ষার্থী ও শিশুদের যাতায়াত ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নে রাস্তাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা সদরের একমাত্র সড়কটি বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে গেছে। ফলে বর্তমানে বড় বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে। এলজিইডির কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল আলম বলেন, বন্যায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কগুলো মেরামত করতে কমপক্ষে ৫৫ কোটি টাকা লাগবে।
বিষয়টি দুর্ভোগ কাটেনি এলজিইডির কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল আলম বলেন, বন্যায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, ভয়াবহ বন্যায় উপজেলায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় খেতের ধান, বীজতলা ও শাকসবজি, আখসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত সোয়া ১০০ কোটি টাকা। কৃষকরা তাদের খেতের ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৃষি খাতে রোপা আমন বীজতলার ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৪২৫ হেক্টর। রোপা আমন ফসলি জমির পরিমাণ ২২৮ হেক্টর। খরিপ-২ শাকসবজি আবাদকৃত জমির পরিমাণ ১০ হেক্টর। শাকসবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হেক্টর। রোপা আউশ ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৮৭০ হেক্টর। বোনা আমন ৩৫০ হেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হেক্টর। সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাঠের পর মাঠ আমন বীজতলা, রোপা আমন, আউশ ও শাকসবজির খেত সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য চাওয়ায় আমরা তৈরি করে তা প্রেরণ করেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাবী বলেন, আমরা বিভিন্ন বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। আর্থিক বা উপকরণ পাওয়া গেলে নির্দেশনা মোতাবেক সেগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
রামগতি (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে বন্যা পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হয়নি। বাড়িঘর, খালবিল ও ভুলুয়া নদী থেকে পানি নামছে ধীরগতিতে। উপজেলা চর বাদাম, চর আলগী ও পোড়াগাছা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর অধিকাংশ সড়কগুলোর কোথায়ও হাঁটুসমান, কোথায়ও হাঁটুর পানির নিচে, কোথায়ও বুক সমান পানি। বেশির ভাগ বসতঘরে এখনো পানি। ধীর গতিতে পানি নামলেও মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের মধ্য কলাকোপা ডাক্তার পাড়া নোমানাবাদ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় নেওয়া গৃহিণী শিরিন আক্তার বলেন, বাড়ির উঠানে এখনো কোমর পরিমাণ পানি। ঘরের মেঝেতে হাঁটু পানি। ঘরের কাঁচা ভিটা পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে। থাকার উপায় নেই। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য ভুলুয়া নদীসহ খালগুলোতে অবৈধভাবে স্থাপিত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ইতিমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ব্লুইজ গেইট খুলে দেওয়া হয়েছে। সব এলাকার পানি নামছে ধীরগতিতে। এতে লোকজনের কষ্ট যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণও।