বয়স্ক ভাতায় ভাত জোটে না সুখ জাদীর

প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০২৪

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

বয়স তার ৮০ ছুঁই ছুঁই, শরীরে বাসা বেধেছে নানা রোগব্যাধি। বছর কয়েক আগে হারিয়েছে স্বামীকে। তার সঙ্গী এখন আধপাগলি মেয়ে আর ৪ শতক জমি, সেই ভিটাটুকুও বারোমাসিয়া নদীর ভাঙনে তলিয়ে যায়। বলছি, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী গ্রামের বিধবা সুখ জাদীর কথা। নাম সুখ জাদি হলেও জীবনে নেই কোনো সুখের বালাই।

চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নূন আনতে পান্তা ফুঁড়োই কথাটি যেনো হারে হারে টের পাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীরা। ভাতার টাকায় খেয়ে পড়ে জীবন পার করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে জীবন জীবিকার তাগিদে কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। সুখ জাদী বেওয়াও এখন তাদেরই অএকেতো বয়স প্রায় ৮০ এদিকে আবার পায়ে গোদরোগ, কেউ কাজে নিতে চায় না সুখ জাদীকে। অনেক কষ্টে বিধবা ভাতা ভোগীর তালিকায় নাম ওঠে সুখ জাদীর। একমাত্র সম্বল এই বিধবা ভাতার কার্ডের কল্যাণে সামান্য কয়টা টাকা পান তিনি। সেই টাকাও পাওয়া যায় তিন মাস পরপর। বর্তমানে চাল-ডালের দাম বাড়লেও বাড়েনি বিধবা ভাতার টাকার পরিমাণ। খাবারও জুটছে না সেই টাকায়।ন্তর্ভুক্ত। ভিক্ষা করা ছাড়া বাঁচার উপাই আছে কী?

ভাতাভোগী সুখ জাদী বেওয়া বলেন, ‘একেতো অসুস্থ শরীল। তবুও দুইটা জীবন বাঁচার তাগিদে এই বৃদ্ধা বয়সেও পায়ে গোদরোগ নিয়ে ভিক্ষা করা লাহে। দিনে এক থেকে দেড় সের চাউল জোটে। সেই চাউলে আদা পাগলী মেয়েডারে নিয়া কোনো রকমেই ডাল-ভাত জুটে। মাছ-মাংস তো দূরে থাক সবজি কেনার সামর্থ্য নাই। মাসেও জোটেনা একটু মাছ-মাংস।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন খাবার পাই, সেদিন খাই। যেদিন পাই না, সেদিন খাই না। কীভাবে যে চলতেছি, সেটা আমি আর আমার উপরওয়ালা জানেন। সরকার হামাক এনা থাকার ঘর করি দিলে ভালো হলো হয়।’বর্তমানে সুখ জাদী ওই এলাকায় বারোমাসিয়া নদীর তীরেই থাকে। কোনোরকম একটি টিনের চালা তুলে মেয়ে মরিয়মকে নিয়েই তার সংসার। এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাতা বৃদ্ধিসহ একটি সরকারি ভাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই চান সুখ জাদী। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

দেশজুড়ে এমন হাজারো সুখ জাদীর হাহাকার হয়তো শুনতে পান না সমাজের বিত্তশালীরা। সুখ জাদির মতো সংকটে পরেছেন ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নাগরাজপুর গ্রামের আবুল কাসেম (৭৫)। তার একমাত্র আয়ের উৎস বয়স্ক ভাতার টাকা। সম্পদ বলতে মাত্র চার শতক জমিতে ভিটেবাড়ি। ১৫ বছর ধরে পঙ্গুত্ব জীবনযাপন এই বৃদ্ধের। কোন রকম লাঠি ভর দিয়ে চলাফেরা করেন তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ছেলে ও ছেলের বউ দুজনেই অসুস্থ, পারেনা হাঁটাচলা করতে। নাতি-নাতনিসহ ৬ সদস্যের সংসারে উপার্জন করার মতো কেউই না থাকায় করুন দুর্দশা নেমেছে তাদের জীবনে। বর্তমানে বয়স্ক ভাতার টাকা ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় কোন রকমেই খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন বৃদ্ধ কাসেম আলীর পরিবার।

কাসেম আলী জানান, ‘খুবই কষ্টে আছি বাহে। আপনারাতো স্ব-চোখে দেখছেন আমাদের এই করুন দুদর্শা। প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয় স্বজন সহায়তায় না করলে না খেয়ে মরতে হতো। তিনি ছেলে ও ছেলের বউয়ের প্রতিবন্ধী ভাতার দাবী জানান।’

একই অবস্থা উপজেলার হেলিপ্যাড এলাকার জমিলা বেওয়া (৯০)। তিনিও ভাতার টাকার জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে সুখ জাদীর মতো ভিক্ষা করছেন।
শুধু এরাই নন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে অধিকাংশ ভাতা ভোগী অসহায় পরিবারগুলোর ভাতার টাকায় ভাত ডালটুকুও জুটছে না। ফলে কোন রকমেই খেয়ে না খেয়ে কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই ভাতাভোগীরা। এই পরিস্থিতিতে ভাতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন অসহায মানুষ গুলো।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন জানান, ভাতাভোগীরা ভাতাভুক্ত হওয়া ও ভাতার টাকা উত্তোলন করতে আগে টুকিটাকি সমস্যা থাকলেও এখন অনলাইন সুবিধা আসায় ভাতা প্রদানে স্বচ্ছতা ফিরেছে। কোন ধরণের ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ীতে বসেই ভাতার টাকা পাচ্ছেন। ভাতাভোগীদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ সব ভাতাভোগী এসব সুবিধা পান আসলেই এই টাকা নিয়ে তাদের সংসার চালানে খুবই কঠিন। আসলে ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি একান্তই সরকার ও সমাজ সেবা মন্ত্রণালয়ের বলে জানান তিনি।
উপজেলার ৬ ইউনিয়নে বয়স্ক ভাতাভোগী ১১ হাজার ৫৪৫ জন, বিধবা ভাতাভোগী ৫ হাজার ১২৫ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ৪ হাজার ৭৪৯ জন। এ ছাড়াও বিশেষ ভাতাভোগী (দলিত সম্প্রদায়) ৪২ জন, শিক্ষা উপবৃত্তি পান ১০৯ জন এবং প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি পান। সব মিলিয়ে মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ১১৮ জন।