বাংলাদেশের চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা লিভার ক্যানসার টেস্ট উদ্ভাবন করলেন

প্রকাশিত: ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০২৩

চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এই পরীক্ষা উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন

বাংলাদেশের একদল চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী। এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্স লিঃ, আইসিডিডিআর, বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী যৌথভাবে ঘোষনা দেন প্রাথমিক পর্যায়ে হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা (যা লিভার ক্যানসার নামে পরিচিত) রোগ শনাক্ত করা যাবে এমন পরীক্ষা উদ্ভাবন করেছেন।

বিখ্যাত পিয়ার রিভিউড আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে এই উদ্ভাবনী পরীক্ষা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ হয়েছে। এই পরীক্ষা সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে এইচসিসি নির্ণয়ে সক্ষম বলে জানিয়েছে আর্টিকেলটি। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

চিকিৎসকরা জানান, এই পরীক্ষার মাধ্যমে ঝুঁকিতে আছে এমন ব্যক্তিদের (যেমন লিভারের রোগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ্যালকোহল গ্রহণকারী) এইচসিসি শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। যার ফলে ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্ক অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।

বিজ্ঞানীদের মতে, এইচসিসি’র ব্যাপকতা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়। ফলে চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যা রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। উদ্ভাবিত এই পরীক্ষা আধুনিক সিকুয়েন্সিং ও মাল্টিপ্লেক্সিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সাধারণ টিস্যু, রক্তের অন্যান্য নমুনা ও নন-এইচসিসি টিউমার থেকে এইচসিসি নমুনাকে আলাদা করে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে।

গবেষণার তথ্যে এসেছে, ৫৫৪ জন ব্যক্তিকে গবেষণার আওতায় এনে এই পরীক্ষার মূল্যায়ন করেছেন গবেষকরা। এর মধ্যে ছিলেন এইচসিসি রোগী, নন-এইচসিসি ক্যানসার রোগী, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি। ফলাফল হিসেবে এইচসিসি শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ সেন্সিটিভিটি ও ৯৫ শতাংশ স্পেসিফিসিটি দেখা গেছে পরীক্ষাতে। গবেষণা ফলাফলে এইচসিসি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্স লিঃ এর চেয়ারম্যান ও কানাডার রয়্যাল সোসাইটি, কানাডিয়ান একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেসের ফেলো এবং এপিজেনেটিক্সের অন্যতম বিজ্ঞানী অধ্যাপক মোশে জিফ বলেন, ‘গবেষণাটি এপিজেনেটিক্স এবং মাল্টিপ্লেক্সড নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং-এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণে আমাদের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি। যা বিশ্বব্যাপী একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। আমরা শিগগিরই এইচকে সায়েন্স পার্কের সিএলআইএ-সিএপি স্বীকৃত ল্যাবরেটরিতে আমাদের বৈশ্বিক এবং স্থানীয় গ্রাহকদের জন্য পরীক্ষাটি সহজলভ্য করতে চাই। পাশাপাশি পরীক্ষাটিকে এইচকেজির এপিজেনেটিক পরীক্ষার ক্রমবর্ধমান পোর্টফোলিওতে যোগ করতে ইচ্ছুক।’

উদ্ভাবনী কাজে নেতৃত্বদানকারী এবং এই আর্টিকেলের একজন প্রধান লেখক ড. ডেভিড চেইশভিলি বলেন, ‘উন্নত পরীক্ষাটি ক্যানসার শনাক্তকরণে একটি নতুন সম্ভাবনার পথ তৈরি করেছে। ক্যানসার রোগ নির্ণয় এবং রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনাসহ প্রথম দিকে এইচসিসি শনাক্তকরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।’

প্রখ্যাত বাংলাদেশি হেপাটোলজিস্ট, চিকিৎসা বিজ্ঞানী, লেখক, ও কলামিস্ট এবং এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা মামুন আল মাহতাব বলেন, যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের একটি মানসম্মত কৌশলের ভূমিকা পালন করে।

আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, ‘এই অগ্রগতি এইচসিসি শনাক্তকরণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা অসাধারণ। এর মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়সহ বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের দলের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। এইচসিসি-র ব্যাপকতা কমাতে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশে এই পরীক্ষা শুরু করার পরিকল্পনা করছি।