বাংলাদেশের ধাঁধার নাম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট

প্রকাশিত: ৪:৩১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫

 

ক্রীড়া ডেস্ক:

 

দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডকে চোকার বলা হতো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকে বেশির ভাগ সময় বিদায় নেওয়ায়। ২০২৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে নিউজিল্যান্ড সে দুর্নাম কিছুটা ঘোচাতে পেরেছে। ফাড়া কেটে যাওয়ায় আরও দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলেছে কিউইরা।

দক্ষিণ আফ্রিকাও গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট। চোকারদের উন্নতি হলেও বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ উন্নতি দেখাতে পারছে না। পারফরম্যান্সের গ্রাফটা দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। তেইশের ওয়ানডে বিশ্বকাপে হতাশ করেছেন সাকিব আল হাসানরা। টানা দুই ম্যাচ হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।

পাকিস্তানের কাছে শেষ ম্যাচ হেরে গেলে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হবে। বাংলাদেশ আইসিসির টুর্নামেন্টে কেন এভাবে ব্যর্থ হয়, কারও কাছেই সে উত্তর নেই। টাইগারদের এমন পারফরম্যান্সে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাকরা রীতিমতো হতবাক।

বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলে ১৯৯৯ সালে। সেই থেকে কোনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েনি। বিরতিহীন টি২০ বিশ্বকাপ খেলেছে ৯টি। অনিয়মিত হলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছে। আট জাতির এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টেই সেরা সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ।

২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজারা। সেমিতে উন্নীত হওয়ার পেছনেও প্রকৃতির হাত ছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছিল। ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য বলতে ১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। সেখানেও বৃষ্টির আশীর্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তবে পারফরম্যান্সের বিবেচনায় সেরা বিশ্বকাপ গেছে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে সুপার এইটে খেলেছিল। গ্রুপ পর্বে ভারতকে, সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল তারা। টি২০ বিশ্বকাপ বিবেচনা করা হলে ২০০৭ সালের প্রথম আসর। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার এইটে খেলেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুলরা।

বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে অধারাবাহিকতার কারণ জানতে চাওয়া হলে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আমি আসলেই বুঝতে পারি না, কেন এমন হয়। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে আমার খুব দুঃখ। বাংলাদেশের সেরা দল খেলেছে ওই আসরে। অনেক টপ প্লেয়ার ছিল এবং চূড়ান্ত ফর্মে ছিল। তাদের সঙ্গে যারা ছিল তারাও চূড়ায় ছিল। সেরা দল নিয়েও আমরা ভালো করতে পারিনি, ফেল করেছি। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বিশ্বকাপে গিয়ে ভিন্ন ক্রিকেট খেললাম।’

২০১০ সাল থেকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে উন্নতি দেখাতে শুরু করে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ঘরের মাঠে ভালো খেলছে। তারাই কেন বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যর্থ হচ্ছে?

কারণ খুঁজতে গিয়ে বাশার বলেন, ‘আমরা দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে যত ভালো, টুর্নামেন্টগুলোতে অত ভালো না। এশিয়া কাপে কিছু সাফল্য আছে। বিশ্বকাপ পর্যায় কেন যেন নিজেদের হারিয়ে ফেলি। বিশ্বকাপ মঞ্চে হয়তোবা অন্য দলগুলোর পরিকল্পনা ভালো থাকে। বিশ্বকাপে চাপ অনেক বেশি থাকে। আমরা হয়তো চাপ হ্যান্ডেল করতে পারি না। একই পারফরমার বিশ্বকাপে গিয়ে পারে না। বিশ্বকাপে দল হিসেবেও ভালো খেলতে পারি না।’

বাংলাদেশ দলের সঙ্গে পাকিস্তানে থাকা নির্বাচক রাজ্জাকের মতে, ‘বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভালো করতে হলে যে মানের ক্রিকেট খেলতে হয়, আমরা তা করতে পারি না। এ রকম টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে হলে বেশ কয়েকজন বড় পারফরমার লাগে। দল হিসেবে ভালো খেলতে হয়। এই দুই জায়গাতে হয়তো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। আরেকটি কারণ হতে পারে– দলের সক্ষমতার চেয়েও প্রত্যাশা বেশি থাকে। যেটা খেলোয়াড়দের চাপে ফেলে।’