ডেস্ক রিপোর্ট:
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। প্রতিবেশী ভারত, পরাশক্তি চীন-রাশিয়া কিংবা বন্ধুপ্রতিম জাপানের মুখেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ। তবে মধ্যপ্রাচ্য তথা মুসলিম দেশগুলোর এ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। তাহলে কি সামনের দিনে বাংলাদেশের নেতৃত্বে নিয়ে মুসলিম দেশগুলোর আগ্রহ নেই?
ঢাকার কূটনৈতিক অঙ্গন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ মুসলিম দেশে যে শাসনব্যবস্থা চলছে তাতে করে তৃতীয় দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে (নির্বাচন) কথা বলতে গেলে তাদের নিজেদেরই প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে পড়তে হতে পারে। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতির ধরনই হচ্ছে অন্যের বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করা। তবে সামনের দিনেও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় তারা।
ঢাকার একজন কূটনীতিক বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে তো নির্বাচন ব্যবস্থা নেই। সেজন্য তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না। সেজন্য অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের জন্য কথা বলা কঠিন। সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমান সরকারকে আবার ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে একটা কথা শোনা যায়। সৌদি আরব এ ধরনের কোনো কথা বলেনি। তবে ঢাকায় তাদের রাষ্ট্রদূত বলেছে, তারা স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়। ওমান, কুয়েত বা জর্ডান নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে। তাদের কোনো মন্তব্য বা অবস্থান নেই।
অন্য এক কূটনীতিক বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে তাদের ভালো বোঝাপড়া ছিল। ২০০৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় আসার পর ধারণা করা হচ্ছিল, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হতে পারে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং গত এক দশকের বেশি সময়ে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরও মুসলিম দেশগুলোর এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ বেড়েছে; যোগাযোগও বেড়েছে।
অন্য একজন কূটনীতিক বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর আরব দেশগুলোতে বেশ কিছু সফর হয়েছে। এরমধ্যে সৌদিতে কয়েকটি সফর হয়েছে। তবে নেতৃত্ব নিয়ে তাদের হয়তো খুব মাথাব্যথা থাকবে না। তাছাড়া তাদের ক্ষমতায় বসার যে পদ্ধতি অন্যের নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলতে গেলে তো ঝামেলায় পড়বে। এতটুকু বলা যায়, তারা স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে শেখ হাসিনা সরকার সাহসী ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে, ইসরায়েলের গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খানকে দেওয়া চিঠিতে বাংলাদেশের নামও আছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কথা বলছে বর্তমান সরকার। সেটা কিন্তু মুসলিম বিশ্ব দেখেছে। ফিলস্তিন ইস্যুর কারণে মুসলিম দেশগুলো থেকে ইতিবাচক সমর্থন পেতে পারে বঙ্গবন্ধুকন্যা।
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক নানা বিষয় নিয়ে সাধারণত তুরস্ক কথা বলে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলস্তিন ইস্যু ছাড়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে আঙ্কারা। তুরস্কের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে এক কূটনীতিক বলেন, তুরস্ক এখন কথা বলে না, আগে বলত। ওরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া ২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠিটা বেশ কাজে দিয়েছে। পরবর্তীতে সময়ে আঙ্কার সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক অনেক মজবুত হয়েছে। সবশেষ, তুরস্কের ভূমিকম্পে বাংলাদেশের সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও সংঘাতহীন নির্বাচন করতে চাই। আমরা চাই, জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবে। বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে নেতৃত্বে দেখতে চায়। অন্যরা কে কী বলল সেটা বড় বিষয় নয়। তবে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো ভালো পরামর্শ দিলে তা আমরা গ্রহণ করি।