বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুর অস্তিত্ব নেই। এখন যে অসুখ হচ্ছে তা একেবারেই সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা বলে জানিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, সোয়াইন ফ্লু শব্দটি আমরা পরিহার করবো। এই শব্দ পরিহার করা খুব জরুরি।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) আইইডিসিআরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এবং আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সোয়াইন ফ্লু নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য এর একটা প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা এবং এ নিয়ে যেন আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। সাবেক এমপি ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন তার পরীক্ষা আইইডিসিআর করেছে এবং তারাই এর রিপোর্ট দিয়েছে।’
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘এইচ-১ এন-১ হচ্ছে সিজনাল (মৌসুমি) ইনফ্লুয়েঞ্জা। এতে ভয়ের কিছু নেই। সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সেগুলোকেই বলা হয়, যেগুলো কমন ফ্লু। তবে এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে সতর্কতা নিতে হবে। কারণ, তাদের হাঁচি-কাশি থেকে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এইচ-১ এন-১ কে আগে সোয়াইন ফ্লু বলা হলেও এখন আর এটাকে সোয়াইন ফ্লু বলা ঠিক নয়। ২০০৯ সালে এর মহামারী হওয়াতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে একটি অ্যালার্ম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালের পরে এই ভাইরাস আর মহামারী নয়। বিশ্বের সব দেশেই এটা এখন সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে শনাক্ত এবং এর সঙ্গে সোয়াইন ফ্লুর কোনও সম্পর্ক নেই। এই মুহূর্তে আমেরিকা এবং ইউরোপে এইচ-১ এন-১ রয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে এবং সেখানে তারা একে কমন ফ্লু বলছে।’
এই ইনফ্লুয়েঞ্জা আমাদের দেশে কমন। সারা বছরই থাকতে পারে, তবে সেটা কিছুটা বেড়ে যায় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে জানিয়ে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘এখন যদি তার দুই-একটি কেস পাওয়া যায়, তাহলে তাকে কোনোভাবেই বড় ধরনের আশঙ্কার কারণ তৈরি হয়েছে বলা যাবে না। এটা হঠাৎ করে বা নতুন করে কিছু হয়ে যাওয়ার মতো নয়। তবে শঙ্কার জায়গা হচ্ছে হাই রিস্ক জনগোষ্ঠীর জন্য। ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা-শ্বাসকষ্ট, ব্রংকিউলাইটিস, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, হার্ট-কিডনি রোগী, এইচআইভি এইডস, শিশু, গর্ভবতী নারী এবং ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের বলা হয় হাই রিস্ক জনগোষ্ঠী। সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাকসিন এবং ওষুধ রয়েছে পর্যাপ্ত। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। সতর্ক হলেই এ রোগের প্রতিরোধ সম্ভব।’
সাবেক সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি সোয়াইন ফ্লুতে মারা যাননি বলেও জানান তিনি। বিএসএমএমইউ থেকে জানতে পেরেছি তিনি আগে থেকেই অ্যাজমায় আক্রান্ত ছিলেন। এইচ-১ এন-১ পজিটিভ হওয়ার পর সেটা জটিল হয়। তিনি শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় মারা গেছেন বলে জানান তিনি।