খেলাধুলা ডেস্ক:
লেবাননের সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তির তারতম্য অনেক। এরপরও ম্যাচের আগে বাংলাদেশের কোচ ও অধিনায়ক জয়ের আশা ব্যক্ত করেছিলেন। বিশেষ করে কোচ অন্তত এক পয়েন্ট পাওয়ার ব্যাপারে জোরালো বক্তব্যের সঙ্গে নানা যুক্তিও দিয়েছিলেন। কাতারের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ঘটল বিপরীত চিত্র। বাংলাদেশকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লেবানন।
লেবাননকে বাংলাদেশ ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল কিংস অ্যারেনায় হোম ম্যাচে। ভেজা মাঠে খেলার সুবিধায় যে সেই পারফরম্যান্স ও ফলাফল আজকের ম্যাচে সেটা অনেকটাই প্রমাণিত। বিশেষত ৬ জুন সর্বশেষ হোম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলও বাংলাদেশকে হারাতে যথেষ্ট গলদঘর্ম হয়েছে। এর পেছনেও মুলত ভেজা মাঠ। বাংলাদেশের ক্রিকেট দল যেমন হোম সিরিজে অতিরিক্ত নিচু ও স্পিন উইকেট বানিয়ে সফল হয় সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবল দলের হোম ম্যাচে ভেজা মাঠে সুবিধা নেয়ার প্রবণতা লক্ষনীয়।
ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশের প্রধান কোচ স্পেনিশ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার সুর খুব নিচুই শোনা গেল। স্বাভাবিকভাবেই বেশ বিব্রত বাংলাদেশ দলের কোচ। বাফুফে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘পেনাল্টির কারণেই শুরুতেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেলো। তারপরও আমি মনে করি প্রথমার্ধে আমরা কিছুটা মানিয়ে নিতে পেরেছি।’ এই ম্যাচের একাদশে ডিফেন্ডার শাকিলকে নিয়েছিলেন কোচ। সেই শাকিলই বাংলাদেশকে ম্যাচে ব্যাকফুটে ঠেলেন।
হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল নির্বাচন, একাদশ গঠন ও খেলোয়াড় পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন উঠে প্রায়ই। গতকাল সেটি আরো বেশি হয়েছে। বিশেষ করে লিগের অন্যতম সেরা পারফর্মার শাহরিয়ার ইমনকে একাদশে রাখেননি। দ্বিতীয়ার্ধে তাকে নামানোর পর খেলার চিত্র খানিকটা বদলেছিল। জনি ও রফিক যারা ক্লাবে বেশি সময় খেলেন না তাদের তিনি জাতীয় দলে ম্যাচ খেলান। যা বরাবরই প্রশ্নের সৃষ্টি করে। ভেজা মাঠে হোম ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য সেই প্রশ্নগুলো আড়াল হয়। অ্যাওয়ে ম্যাচে বড় হারে আবার সামনে আসে।
বাংলাদেশ কালকের ম্যাচে ৪ গোলে হেরেছে। প্রায় প্রতিটি গোলের পেছনেই রক্ষণের ভুল রয়েছে। কোচ গত কয়েক ম্যাচেই রক্ষণে রদবদল করেছেন। এর খেসারত দিয়েছে দল। যদিও তিনি এই ব্যর্থতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। চার গোলে হারের পরও খেলোয়াড়দের প্রশংসা করেছেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা আরও বেশি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি, চাপ দেওয়ার চেষ্টা করে যেটা প্রতিপক্ষকে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ করে দিয়েছিল। যেভাবে আমরা বল পজিশন রেখেছি, তা নিয়ে আমি খুশি।’
বাংলাদেশ ৪ গোল হজম করলেও দোহায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা স্টেডিয়ামে ছিলেন পুরো সময়। প্রবাসী বাংলাদেশির প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে কোচ বলেন, ‘অনেক প্রত্যাশা নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে এসেছিলাম আমরা। এটা কঠিন ফল আমাদের জন্য। হতাশাজনক। আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন করতে পারতাম অনেক বাংলাদেশি সমর্থকের সামনে।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সমাপ্তি। সামনের বছর এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের পরবর্তী রাউন্ড। মার্চ থেকে সেই বাছাই শুরু হবে। কোচের চুক্তি এই বছরের ডিসেম্বরের পর্যন্ত। এরপরও তিনি এশিয়ান কাপ বাছাই নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘এখন আমাদের উজ্জীবিত হতে হবে, সবাইকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করতে হবে এশিয়ান প্রস্তুত হওয়ার জন্য।’
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কোচের উপর নাখোশ। এমন বাজে হারের পর তার বিকল্প ভাবনা শুরু হতে পারে। দুই পক্ষের চুক্তিতে এক মাসের নোটিশে চুক্তি ভঙ্গের ধারা রয়েছে। সেপ্টেম্বর-নভেম্বরে ফিফা ফ্রেন্ডলি উইন্ডো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফলে কোচে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা থেকে যায়। যদিও নির্বাচনের আগে বাফুফে কর্তারা কোচ রদবদল করে আলোচনা-সমালোচনায় পড়ার ঝুঁকি নেবেন কিনা সেটাও দেখার বিষয়।