
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আবহমান বাংলায় চিরায়ত ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে চৈত্র সংক্রান্তি। উত্তর-আধুনিকতার ছোঁয়ার পরেও দুটো সংক্রান্তি ঘটা করে পালন করা হয় পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি এবং চৈত্র সংক্রান্তি।আজকে কথা বলব চৈত্র সংক্রান্তি নিয়ে, উত্তপ্ত ভূমিতে সূর্যের পেট প্রশমন ও সু-বৃষ্টির আশায় কৃষিজীবী সমাজের হাতে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবের শুরু।
চৈত্র অর্থাৎ উজ্জ্বল আলো। এক সময় গ্রামীণ জনপদের প্রধান উৎসব হলেও কালের প্রবাহে কবেই যেন সে ঠাঁই করে নেয় নগর জীবনেও। হয়ে ওঠে এক লোকায়ত ও সর্বজনীন উৎসব।
ধর্মের অনুষঙ্গ তাও আছে বৈকি, সংস্কৃতি আর ধর্মের মেলবন্ধন যেন। সনাতন ধর্মে তো আছে সৃষ্টি আর প্রলয়ের যুগপৎ আরাধনা। হ্যাঁ, চৈত্র সংক্রান্তি তার মূর্ত প্রতীক।
পুরাতনের বিসর্জনের পাশাপাশি নতুনকে আহ্বানের তোড়জোড়। গাজনের জৌলুশে এখন ভাটার টান। তাই শহর অঞ্চলেও দেখা যায় গাজন ছবি। গাজন শব্দের উৎপত্তি (মূল শব্দ এসেছে সংস্কৃতি থেকে) গর্জন। তা থেকে মতান্তরে সন্ন্যাসীদের হুংকারে শিব সাধনাই গাজন নামে প্রচলিত।
গাজনের উল্লেখ মেলে মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যে। ধর্মরাজকে তুষ্ট করতে রানী রঞ্জাবতীর গাজন পালনের কথা উল্লেখ আছে ধর্মমঙ্গলে। চৈত্র সংক্রান্তির বিশেষ আকর্ষণ চড়ক পূজা। ঋজু বৃক্ষ বা তার অভাবে একটি লম্বা বাঁশ পুঁতে চড়ক গাছ বানানো হয়।চড়ক উপলক্ষে বসে মেলা। পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা তিলের খাজা, তালপাতার পাখা, মাটির সারস এবং রংবেরঙের হাঁড়ি পাতিল।
দিন বদলের হাওয়ায় গাজনেও বদল এসেছে বৈকি, তবে এখনো গাজন সব বর্ণের মানুষের উৎসব। বাংলা বছর শেষে সব ভেদাভেদ ভুলে চৈত্র সংক্রান্তি রূপ নেয় এক মহামিলন মেলায়।
তাই কবিগুরু বলেছেন,
‘মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।’
আর লোকায়ত কথায় ভেসে বেড়ায়,
নতুন বছর আসছে আবার, নতুন বছর আসছে।
মনের ভেতর মনের কথা আনন্দে তাই হাসছে।
নতুন বছর আসবে ঠিকই নতুন বছর আসবে।
আবার সবার মন নদীতে খুশির ভেলা ভাসবে।
নতুন বছর আসছে বলেই মন খুশিতে নাচছে।
অনেক নতুনের আগমনী জীবন বেশ ভালো টের পাচ্ছে।
এ মনের আকাশে বাতাসে কেবলই শুনছি বৈশাখের ডাক।
শুনছি নতুন বছরের প্রতিধ্বনি। কিন্তু বাস্তবতা এটাই আমরা পঞ্জিকা না দেখে বাংলা দিন তারিখ বলতে পারি না। সরকারিভাবে বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে।
অন্যান্য সাহিত্য বাংলা ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। হয়তোবা বাংলা ভাষা আরও প্রাণবন্ত হবে।