বাজেটে সিগারেটের ঘোষিত খুচরা মূল্য ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম ৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সমন্বয় নামের একটি সংগঠন। তারা বলছে, এই সময়ের মূল্যস্ফীতির হার ৩২ শতাংশ ছিল। ফলে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সিগারেট আরও সহজলভ্য হয়েছে। তাই অর্থবছরের বাজেটে সব স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে।সোমবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে উন্নয়ন সমন্বয় আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আবদুল্লাহ নাদভী বলেন, চলতি অর্থবছর জুড়ে যেহেতু গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে, তাই আসন্ন অর্থবছরের বাজেট সব স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে। ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের মধ্যে সিগারেট ব্যবহারের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় সিগারেটের দাম বাড়াতে হবে। এ ছাড়াও কর আহরণ সহজীকরণের জন্য বাজারে বিক্রি হওয়া সিগারেটের স্তর সংখ্যা কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করার পাশাপাশি সিগারেট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব ২০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে সিগারেটে কর প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।
সিগারেটে কার্যকর করারোপ হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে, সিগারেট শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকেরা কর্মসংস্থান হারাবে ইত্যাদি নানাবিধ অপপ্রচার চালানো হয় স্বার্থান্বেষী মহলের পক্ষ থেকে। আগেই বলা হয়েছে, সিগারেট বিক্রি থেকে সরকার যে রাজস্ব পেয়ে থাকে তার তুলনায় সিগারেট ব্যবহারজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। তাছাড়া কার্যকর করারোপ করলে মধ্যম মেয়াদে সিগারেট বিক্রি থেকে পাওয়া কর কমবে না, বরং বাড়বে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর তথ্যমতে, দেশে তামাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের সংখ্যা মাত্র এক লাখ ৩২ হাজার যা মোট কর্মে নিয়োজিত নাগরিকের সংখ্যার মাত্র ০.২ শতাংশ। আর প্রতি বছর কেবল এ খাতে বাংলাদেশে দুই লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। কাজেই সিগারেটে কার্যকর করারোপের ফলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাটি পুরোপুরি অমূলক। আসন্ন অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপের আলোচনা ও নীতি-ভাবনার সময় এসব অপপ্রচার বিষয়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা একান্তভাবে কাম্য।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ বলেন, অনেকে ছোট ছেলে-মেয়েদের সামনে ধূমপান করেন। এতে তারাও আগ্রহী হয়ে আসক্ত হয়। আগে স্কুল কলেজে ছাত্রদের সিগারেট খেলে তাদের টিসি দেওয়া হতো। এটা যদি চালু থাকে তাহলে সিগারেটের প্রতি আসক্তি কমবে। আমার মনে হয়, সিগারেটের ওপর ট্যাক্স বৃদ্ধি করার ফলে এর ব্যবহার অনেকাংশেই কমে আসবে। আগে যারা পাঁচটা সিগারেট খেতেন তারা সেটা কমিয়ে তিনটায় চলে আসবে। এভাবেই ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সাবেক জাতীয় ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, পরিবার যদি সুন্দর শিক্ষা দিতে পারে তাহলে আমার মনে হয় অনেকাংশে ধূমপান কমে আসবে। সিগারেট খাওয়ার নির্ধারিত স্থান ঠিক করে যদি আইন করে দেওয়া যায় তাহলেও ধূমপান কমে আসবে। কেবল ভ্যাট ট্যাক্স না বাড়িয়ে পরিবার ও নিজেদের শিক্ষা এবং এর বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রাখলে ধূমপান কমে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলমের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অর্থনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।