বাপা এক্সপোতে এক আঙ্গিনায় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের সব আয়োজন

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩

সেলিনা আক্তার:

প্রক্রিয়াজাত যেসব খাদ্যপণ্য আমরা কিনে খাই, সেগুলো মোড়কজাত হয়েই পৌঁছায় আমাদের কাছে। তবে এসব খাবার তৈরির পেছনে শস্যের বীজ-সার সংগ্রহ থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য মোড়কজাত ও সরবরাহ পর্যন্ত রয়েছে বেশকিছু ধাপ। এতে প্রয়োজন হয় নানা ধরনের প্রযুক্তি এবং বহুমাত্রিক উপকরণের। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের এমন প্রয়োজনীয় পণ্য, যন্ত্র, প্রযুক্তি ও পরিষেবার পাশাপাশি হাজারো অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি কৃষিপণ্যের পসরা সেজেছে এক আঙিনায়। এসব আয়োজন নিয়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে নবম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো।

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (রিমস)। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তিন দিনব্যাপী এ এক্সপো উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে এক্সপো, যা সবার জন্য উন্মুক্ত।

এক্সপোতে রয়েছে খাদ্যশিল্প সংশ্লিষ্ট ২১৩টি স্টল। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এই মেলায় ভারত, চীন, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়াসহ প্রায় ২০ দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। তারা মেলায় খাদ্যশস্য বীজ ও সার থেকে শুরু করে হিমাগার তৈরি, খাদ্য সংরক্ষণ ও তৈরির প্রযুক্তি, নানা ধরনের ফুড ইন্ডাস্ট্রি ম্যাটেরিয়ালস (খাদ্যশিল্পের উপকরণ), প্যাকেজিং ম্যাটেরিয়ালস (মোড়কজাত উপকরণ), ফুড সার্ভিসেস (সেবা) এবং দেশি-বিদেশি প্রায় সব ধরনের ফুড প্রোডাক্ট (খাদ্যপণ্য) প্রদর্শন করছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উদ্বোধনের পর মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে ছিল দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস। বিভিন্ন উপকরণ জায়গা করে নিয়েছে মেলাজুড়ে। প্রযুক্তি আর কৃষিপণ্যের কত কিছুই না জায়গা করে নিয়েছে এসব স্টলে। ছুটির দিন হওয়ায় মেলার প্রথম দিনেই দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতারা মেলার স্টলগুলোতে ঘুরছেন, জানছেন এবং অনেকেই ক্রয়াদেশ দেওয়ার জন্য কথা বলেন।

মেলায় কৃষিপণ্যের জন্য হিমাগার তৈরির প্রযুক্তি প্রদর্শন করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড (বিবিএমএল)।

প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেলায় হিট ও সাউন্ড প্রুফ (তাপ ও শব্দ নিরোধক) স্যান্ডউইচ প্যালেন প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটি হিমাগার কিংবা খাদ্য সংরক্ষণের জন্য স্টোর তৈরিতে প্রয়োজন হয়। এটি দেওয়াল ও ছাদে ব্যবহার করা হয়। যার মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, এ স্যান্ডউইচ প্যালেন দিয়ে তৈরি রুমে বাইরের তাপ রুমের ভেতরে প্রবেশ করে না। ফলে রুমে সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। এ প্রযুক্তি এখন খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে ওষুধ সংরক্ষণেও অত্যন্ত জনপ্রিয়। এমনকি বাসা বাড়িতেও ব্যবহার করা হয়।

এক্সপোতে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের নানা প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে কয়েক ডজন। খান ডিন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার সালেহ আহমেদ খান বলেন, ৪৯ বছর ধরে বিদেশি ১৪টি প্রতিষ্ঠানের নানা উপকরণ সরবরাহ করছে তার প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। পোশাকশিল্পের মতো এ খাতেও আগ্রহ রয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর।

চীনের প্রতিষ্ঠান ইয়াংজিয়াং ওয়েনভার ব্যবস্থাপক ভেরা জানান, বাংলাদেশ তাদের জন্য খুব বড় বাজার। তার প্রতিষ্ঠান এ মেলায় বিস্কুট তৈরির মেশিন বিক্রি করতে এসেছে। যা আগেও দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেছেন তারা।

ভেরা আরও জানান, একই মেশিনে বিস্কুট তৈরি ও মোড়কজাত করা সম্ভব। এমন মেশিন তারা প্রদর্শন করছেন। যার দাম চার লাখ মার্কিন ডলার। এটি ১০০ মিটার লম্বা। যার একটি ডামি মেশিন স্টলে প্রদর্শন করা হয়েছে।

কথা হয় চীনের সার বিক্রেতা এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সঙ্গেও। তিনি জিংক সার বিক্রির জন্য প্রদর্শন করছেন। বাংলাদেশে ওই সার বিপণন করতে চান তিনি।

আইসিসিবির এক নম্বর প্যাভিলিয়নে দেশি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের সবচেয়ে বড় পসরা। সেখানে ঢুকতেই চোখে পড়ে প্রাণের বিশাল প্যাভিলিয়ন। সেখানে কেক ও বিস্কুট, গুঁড়ো মশলা ও কালিনারি পণ্য, নুডলস, জুস ও বেভারেজ, ডেইরি পণ্য, স্ন্যাকস, ফ্রোজেন ফুডসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য দৃষ্টি কাড়ছে দর্শনাথীদের। প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ জহুরুল ইসলাম নিউজ পোস্টকে বলেন, প্রাণের প্যাভিলিয়নে প্রায় ২০০ ধরনের পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। যা এ মেলায় সর্বোচ্চ। দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি হয় এমন পণ্যের পাশাপাশি এ স্টলে রয়েছে রপ্তানি পণ্যও।

মেলার বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক বলেন, বাপা শুরু থেকেই ফুড প্রসেসিং খাতের উন্নয়নের স্বার্থে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বাপার মূল লক্ষ্যই হলো এ খাতের ক্রমবর্ধমান বিকাশ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া। ফুড প্রসেসিং খাত এবং এর সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ও সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেগবান হবে। আর এ খাতকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে এ ধরনের মেলা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে বাপা আশাবাদী।

আয়োজক সংস্থা রিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চানমোহন সাহা বলেন, মেলা নিয়ে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য-প্রযুক্তি ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে উদগ্রীব হয়ে আছে। শুরু থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি শুক্র ও শনিবার মেলায় প্রচুর দর্শনার্থী আসবে।