এসএম দেলোয়ার হোসেন :
নাড়ীর টানে গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন কর্মজীবীর সাধারণ মানুষ। লঞ্চে আরামদায়ক ভ্রমণ হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঝুঁকি এড়াতে নিরাপদ বাহন হিসেবে অনেকেই বেছে নিয়েছেন সড়ক ও রেলপথকে। আর তাই দ্রুত কর্মস্থলে যোগদান করতে বাস ও ট্রেনযোগে স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষেরা। কোথাও কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ঢাকায় পৌঁছেছেন যাত্রীরা। তবে ফিরতি পথে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
যাত্রী পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, ঢাকায় ফেরার পথে ও যাত্রীদের এখনো তেমন কোন চাপ নেই। অর্ধেকের কম যাত্রী নিয়ে যাত্রী আনতে তাদের ঢাকা ছাড়তে হচ্ছে। তাই আসার পথে কিছুটা বকশিশ হিসেবে ন্যায্য ভাড়ার সাথে কিছুটা বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। এরপরও গাদাগাদির চাইতে সিটে বসে স্বাচ্ছন্দে ঢাকায় ফিরতে পেরে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আজ সোমবার (৩ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনাল এলাকা ও কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে সাধারণ যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ঈদের টানা পাঁচদিনের ছুটি শেষে সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলেছে গতকাল রোববার। ছুটি শেষ হওয়ায় প্রথম দিন অফিস করতে গত পরশু থেকেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আজও ফিরছেন অনেকে, তবে সেই সংখ্যা কম। অনেকে আবার ঢাকায় ঈদ করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাতে ঈদের পঞ্চম দিনেও ঢাকা ছাড়ছেন।
গত ২৯ জুন সারাদেশে উদযাপিত হয় মুসলমান ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ উপলক্ষে প্রথমে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন নির্ধারিত হয় সরকারি ছুটি। পরে সরকারের নির্বাহী আদেশে ২৭ জুনও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে ঈদে সরকারি ছুটি মেলে চারদিন। ৩০ জুন চারদিনের ছুটি শেষ হলেও ১ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটি শনিবার। ফলে আরও একদিন ছুটি পেয়ে যান সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে টানা পাঁচদিন ছুটি মেলে তাদের।
সরকারি নির্দেশনা মেনে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিতে ঈদ উপলক্ষে চারদিনের ছুটে দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির চাকরিজীবীরাও টানা পাঁচদিনের ছুটি পেয়ে যান। এদিকে ছুটি কাটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই অফিস করতে আজও ঢাকায় ফিরছেন।
রাজধানীর ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ফাঁকা সড়কগুলোতে কিছুক্ষণ পরপর এসে থামছে যাত্রীবাহী গাড়ি। এসব গাড়িতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের অধিকাংশই চাকরিজীবী। অনেকে একা ফিরছেন, কেউ ফিরছেন পরিবার নিয়ে।
অনেকে ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি একদিন ছুটি কাটিয়ে আজ ঢাকায় ফিরছেন। এছাড়াও অনেকে বাড়তি দুদিন বা তার বেশিও ছুটি নিয়েছেন। ফলে চলতি সপ্তাহজুড়ে মানুষ ঢাকামুখী হবেন। আগামী সপ্তাহে চিরচেনা রূপে ফিরতে পারে ঢাকা।
আইরিন আক্তার একটি সরকারি হাপাতালের নার্স। তিনি নিউজ পোস্ট বিডিকে বলেন, শনিবার পর্যন্ত ছুটি ছিল, গতকাল বাড়তি ছুটি নিয়েছিলাম। তাই আজ ঢাকায় ফিরলাম। শিফটের ডিউটি, তাই সকালে বাড়ি থেকে রওনা হয়েছি। সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে শরীয়তপুর থেকে চলে এসেছি। এখন বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে দুপুরের শিফটে অফিসে কাজ শুরু করবো। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের রেখে এসেছি, খুব খারাপ লাগছে। অফিস যেহেতু করা লাগবে তাই চলে আসতে হয়েছে। নাহলে আরও কয়েকদিন বাড়িতে থাকতে পারলে ভালো লাগতো।
রেজাউল করিম লোটন নামে ঢাকায় ফেরা এক চাকরিজীবী বলেন, ছুটি তো গতকালই শেষ হয়েছে। অফিসের বসকে ফোন করে অনুরোধ করেছি একদিন বাড়তি থাকবো। তিনি অনুমতি দেওয়ায় গতকালও বাড়িতে থেকেছি। আজ এলাম। এখন স্ত্রী-সন্তানদের বাসায় রেখে সরাসরি অফিসে যাবো। তিনি বলেন, রাস্তা একেবারেই ফাঁকা, আসার পথে যানজটে কোথাও থামতে হয়নি। এটা ছিল খুব শান্তির বিষয়। যাওয়ার পথেও শান্তিতেই গেছি। আমি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রতিটি ঈদই গ্রামে করি। আমার মা বাড়িতে আছেন, তার সঙ্গে ঈদ করতে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাই।
এদিকে কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর ৫ নম্বর গলির বাসিন্দা ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ রুবেল জানান, পদ্মা ব্রিজ হওয়ায় এবার স্বাচ্ছন্দের। সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে ঈদের ছুটি কাটিয়েছি। ছুটি শেষে বাসযোগ্য স্বাচ্ছন্দে ঢাকায় ফিরে এসেছি আজ। কোথাও কোন ধরনের বিরম্বনার শিকার হতে হয়নি তাকে।
এদিকে কমলাপুর স্টেশনেগিয়ে দেখা যায, ট্রেনে ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। আবার অনেকে ট্রেনযোগে নিজ গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ ঈদের ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে। ঈদুল আজহা ঘিরে এ বছর রাজধানী ছাড়েন প্রায় ১ কোটি মানুষ। ঈদ শেষে তারা স্বজনদের সঙ্গে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোর স্মৃতি নিয়ে ফিরছেন ঢাকায়। গত দুদিন ধরেই ঈদের ফিরতি যাত্রায় কেউ বাসে, কেউ লঞ্চে, কেউ ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরছেন।
ঈদযাত্রায় সড়কপথে কোনো কোনো জায়গায় যাত্রীদের যানজটের ভোগান্তি এবং লঞ্চে যাত্রী কম থাকায় ছাড়ার দীর্ঘ অপেক্ষা থাকলেও গত ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও রেলপথে তুলনামূলক স্বস্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন যাতায়াত করছেন। রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। আজ সোমবার (৩ জুলাই) সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই রাজধানীতে ফিরছেন ঈদযাত্রীরা। স্টেশনে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা যথারীতি আগে থেকেই ফিরতি যাত্রার টিকিট সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। কোনো ধরনের ধাক্কাধাক্কি ছাড়াই ট্রেনে উঠতে পেরেছেন। তাদের ভোগান্তিমুক্ত ভ্রমণ এবার আনন্দদায়ক হচ্ছে।
মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার ছুটি শেষে আজ সোমবার ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সকাল থেকে ঈদযাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ট্রেনের শিডিউলেও কোনো হেরফের হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর আসছে ট্রেন। আবার যাত্রী নিয়ে ফিরেও যাচ্ছে।
একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকায় ফেরা যাত্রী মো. আব্দুল লতিফ ও হানিফ মিয়া নিউজ পোস্ট বিডিকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি গিয়েছিলাম। ঢাকায় ব্যবসার জরুরি কাজ থাকায় আজই চলে এলাম। ট্রেনে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে পেরেছি।
পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফেরা গোলাম মোর্তোজা বলেন, পরিবার নিয়ে বাসে আসতে গেলে নানা ঝামেলা হয়। রাস্তায় জ্যাম, বাস জার্নি করতে গেলে অনেকে অসুস্থও হয়ে যায়। তাই ট্রেনে আসি। আর এখন ট্রেনে আগের মতো ভোগান্তি নেই। ট্রেনের যাত্রা এবং সেবার মান আগের চেয়ে এখন অনেক ভালোও উন্নত।
কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে পৌঁছানো একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক যাত্রী নিউজ পোস্ট বিডিকে বলেন, আজ থেকে আমার অফিস শুরু হবে। অফিস শুরুর আগেই ঢাকায় ফিরলাম। ট্রেন ভালোভাবেই পৌঁছাতে পেরেছে।
কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন নিউজ পোস্ট বিডিকে বলেন, সকাল থেকে যথাসময়ে সব ট্রেন স্টেশনে আসছে। যাত্রীরাও তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই ঢাকায় ফিরতে পারছেন। আবার অনেকেই কাজের চাপে ঢাকায় ঈদ শেষে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়ে কমলাপুর রেল স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছেন। সিডিউল অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন রুটের ট্রেন ঢাকা ছাড়ছে ও ঢাকায় আসছে।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, আধা ঘন্টা এক ঘন্টা পর পর দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাট নৌবন্দরের টার্মিনালে লঞ্চ ভিড়ছে। তবে যাত্রীর্ তেমন কোন চাপ নেই কোন লঞ্চেই। আবার অনেকের লঞ্চযোগে গ্রামের বাড়িতে রওনা দিয়েছেন।
লঞ্চের সুপারভাইজার ও খালাসিরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণেই যাত্রা পথে ঝুঁকি এড়াতেই বাস ট্রেনের দিকে ঝুকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীর। যাত্রীরা বলেছেন, লঞ্চের ভ্রমন আরামদায়ক হলেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে যাত্রা পথে লঞ্চে চড়তে নিরুৎসাহিত হয়েছেন। চাহিদার তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায়। লোকসানের আশঙ্কা করছেন লঞ্চ মালিকরা।