বিএনপির সঙ্গে কেন আজরা জেয়ার কথা হলো না?

প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
টুইট বার্তা দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা ছাড়লেন আজরা জেয়া। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকল্পে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দেশের বৃহত্তম দুটি রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থানে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া নানা প্রেক্ষিতে তার এই সফরটি ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফরকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে গত কয়েকদিন বেশ উৎসাহ-উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চারদিনের সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এমনকি এই সাক্ষাৎকার পর্বে বাদ পড়েনি শ্রমিক আন্দোলনকর্মী, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ ও মানবাধিকার রক্ষাকর্মীও। এছাড়া সরকারপ্রধানের এক উপদেষ্টার বাসায় নৈশ্যভোজেও অংশ নিয়েছেন মার্কিন এ প্রতিনিধি দল। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে দেশের দ্বিতীয় বৃহতম রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে কেনো বৈঠক হয়নি। দেশব্যাপী সবার অন্যতম আলোচনার বিষয় এখন এটি।

সফর শেষে ফেরার সময় এক টুইট বার্তায় আজরা জেয়া লিখেছেন, ‘দেখা হবে ঢাকা! একটি ফলপ্রসূ ও উৎসাহব্যাঞ্জক সফরের জন্য সরকারের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুশীল সমাজ, রাষ্ট্রদূত হাস এবং আমাদের নিবেদিত ঢাকাস্থ দূতাবাস টিমকে ধন্যবাদ। অবাধ ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য জোরালো পদক্ষেপ, শ্রম অধিকার এবং রোহিঙ্গাদের সহায়তাসহ অংশীদারদের সাথে সমন্বয় অব্যাহত রাখতে আমরা উন্মুখ।’

গত ১১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টানা চার দিনের এই সফরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপ করুক। তবে এ বিষয়ে দেশটি (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

আজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কিনা কিংবা না হলে কেন হয়নি এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি কেউই।

এদিকে শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নোয়াখালীর এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেছেন, ‘সরকার বিদেশিদের কি বুঝাচ্ছে জানি না। আমরা বিদেশি-টিদেশি বুঝি না। একটাই বুঝি দেশের জনগণ এ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই তারা জেগে উঠেছে। কৃষক-শ্রমিক জোট বেঁধে আজ রাজপথে নেমেছে।’

মির্জা ফখরুলের এমন অভিব্যক্তি কি তাহলে বলছে যে, বিএনপি হয়তো মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে? বিএনপির মতো দ্বিতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দলটিকে এড়িয়ে গেল কিনা মার্কিন প্রতিনিধি দল? এমন প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার সঙ্গেই নয় পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আট সদস্যের প্রতিনিধি দলের কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে কিনা, তাও জানা যায় না।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদ শ্যামা ওবায়েদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলবো না। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেন।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবে না।

বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির আহ্বায়ক ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ‍এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চার দিনের সফরে মার্কিন প্রতিনিধি দলে আজরা জেয়া ছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনান্ড লু ও ইউএসএআইডি কর্মকর্তা অঞ্জলী কৌর।

এদিকে মার্কিন প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধিদল আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় এবং এখানে নির্বাচনে যাতে সহিংসতা না হয় সেটাই তাদের কাম্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। এখানে বাইরের কোনো শক্তিশালী দেশ চাপ দিয়ে কোনো কিছু করাতে পারবে না। সূত্র-কালবেলা।