বিএনপি ডাকা হরতালে পুড়ল ৯ গাড়ি, আদালত চত্বরে ফাটল ককটেল: সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের দাবি

প্রকাশিত: ১১:৩১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২৩

নের হরতালে ট্রেনসহ ১৯ যানে আগুন, বুধবার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ

মোঃ সাইফুল ইসলাম :

বিএনপিসহ সরকারবিরোধীদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের শেষ দিন সোমবার রাজধানীসহ সারাদেশে আরও ৯ গাড়ি আগুনে পুড়িয়েছে দুর্বৃত্তরা। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শুধু রাজধানীতেই তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এদিকে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। দু’দিনের হরতালে জামালপুরে ট্রেন ছাড়াও সব মিলিয়ে ১৯টি যানে আগুন দেওয়া হয়। বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যায়িত করে বিএনপি’র নিবন্ধন বাতিলের জোর দাবী জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কায়দায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পরিবহন সেক্টরের মধ্যে এমনও গাড়ির মালিক আছে যার জীবনের সমস্ত উপার্জন দিয়ে গাড়ি ক্রয় করেছে। বিএনপি’র হরতাল অবরোধ নামে অগ্নিসংযোগ সন্ত্রাসী কার্যক্রমে প্রতিদিন গাড়ি পড়াচ্ছে। এতে করে পরিবহন সেক্টরের ক্ষুদ্র মালিকানায় যেসব পরিবহন পরিচালিত হয় তা অচিরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে পরিবহন সেক্টর পুরোপুরি রাঘববোয়ালদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। খেটে খাওয়া দিন মজুরদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়। হরতাল অবরোধের কারণে রাজধানীতে নিম্ন শ্রেণীর শ্রমিকরা কোন কাজ পাচ্ছে না। এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। মাস শেষে বাসা ভাড়া, বাচ্চাদের লেখাপড়ার খরচ পরিচালনা করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে। রাজধানীর লালবাগে রিক্সা চালক মোঃ আজিজুল কে হরতাল অবরোধের কথা বললে  তিনি নিউজ পোস্টকে জানা, হরতাল অবরোধ হচ্ছে গরিবকে মারার একটা যন্ত্র। যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি ডাকে তাদের পরিবার পরিজনের কোন সমস্যা হয় না। তারা দল থেকে মোটা অংকের টাকা পায়। আমাদের খেটে খাওয়া মানুষের কথা বিএনপি চিন্তা করে না। এদিকে রাজধানী গুলিস্তানে লেগুনার হেলপার মোঃ শাহিনের সাথে আলাপ কালে তিনি নিউজ পোস্টকে জানা। হরতাল অবরোধের নামে যে জ্বালাপোড়া হয় এতে করে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হইতে ভয় পায়। আর খেটে খাওয়া নিম্ন বৃত্তের মানুষজন ঘর থেকে বের না হলে আমাদের রুটি রোজি জুটে ন। যারা বড়লোক তারা তাদের নিজ গাড়িতে করে চল।  তাই নিম্নবিত্ত সকলের দাবি, বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যায়িত করে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।

এদিকে এক দিন বিরতি দিয়ে আবারও অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সোমবার বিকেলে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেন।

ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় বিআরটিসির একটি দোতালা বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। বিকেল ৫টার দিকে পল্টনে আগুন দেওয়া হয় তানজিল পরিবহনের বাসে। এ ছাড়া সন্ধ্যায় মতিঝিলে মধুমিতা হলের সামনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে আগুন দেওয়া হয়।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি জসীম উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়ার পরপরই অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুল ইসলাম টুটুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিআরটিসির চালক প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন টুটুল তাঁর গাড়িতে আগুন দিয়েছে।

রোববার রাতে বগুড়ার নন্দীগ্রামে একটি ট্রাক ও ভটভটিতে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া সকালে বগুড়া শহরের কানুছগাড়ি মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে কেউ আহত হয়নি।

আগের রাতেও বগুড়া শহরের কয়েক জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রোববার রাতে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-রংপুর মহাসড়কে গমবোঝাই একটি ট্রাকে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একই রাতে মহাসড়কের পাশে পার্ক করে রাখা তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। গভীর রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়া রাস্তার মাথার অদূরে মাদারবাড়ি এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের দুটি ও হানিফ পরিবহন একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। আজ সকালে সিলেট শহরের মেন্দিবাগ এলাকায় যুবদলের নেতাকর্মীরা কয়েকটি ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে।

এদিকে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনায় রমনা থানার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন শুনানি পেছানোর পরপরই মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বিকট শব্দে ককটেলটি বিস্ফোরিত হয়। পরে লালবাগ জোনের উপকমিশনার জাফর হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের ঊর্ধ্বতন একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ‘বিচার বিভাগকে কলঙ্কিত করতে আদালতের আঙিনায় এ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িতদের অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে।’

প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দে আদালতের হাজতখানার পাশে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় অনেকেই ভয়ে দৌড় দেন।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বোরকা পরা এক নারী ও এক পুরুষ মহানগর দায়রা জজ আদালতের চারতলা থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু নিচে ফেলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে এক শিশুও ছিল। ককটেল ছোড়ার পর দ্রুত তারা ওই এলাকা ছাড়েন।

এদিকে রাত ৮টার দিকে মৌচাকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।

আরও যারা গ্রেপ্তার

গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় র‍্যাব ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন আদাবর থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব শেখ ও ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোয়াইব আহম্মেদ সজীব।

এদিকে রাজধানীর ডেমরায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ককটেল ও ককটেল তৈরির সরঞ্জামসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বিকেলে ডেমরার বাঁশেরপুলের খাননগর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব বলছে, নাশকতার উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ওই বাড়িতে ককটেল তৈরি করছিল। তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, র‍্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট ককটেল নিষ্ক্রিয় করে।

৪৮ ঘণ্টার অবরোধ

অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, লুটেরা আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। তারা আবারও একতরফা নির্বাচনের বন্দোবস্ত করছে। নির্বাচন কমিশন যে সরকারের পথরেখা অনুসারে চলবে, তার প্রমাণ নিজেরাই দিচ্ছে। তারা সরকারের সাজানো প্রশাসনের কোনো রদবদল করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন ও নির্বাচনী তপশিল বাতিলের দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আগামীকাল সকাল ৬টায় শেষ হচ্ছে। এর মধ্যেই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন রিজভী। তবে এবার হরতালের বদলে অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।

এর আগে হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ডের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয় বিএনপি। এর পর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ শীর্ষ অনেক নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ৩১ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি দেয় বিএনপি।