তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি পরিবারতন্ত্রের প্রধান পৃষ্টপোষক এবং তারা পরিবারতন্ত্র লালন করে। আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র চলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “পরিবারতন্ত্রের মধ্যে বসে তিনি যে কথা বলেছেন, এটি তার দলের বেলায়ই প্রযোজ্য।” আজ সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী তার দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রেসব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন।
সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে কোন যোগ্যতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে প্রশ্ন রেখে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তিনি কি আগে কখনো রাজনীতি করেছেন? নাকি সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বলেই তাকে এই পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাবিথ আউয়ালের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। প্রথমবার যখন মনোনয়ন দেয়া হয়, তখন তিনি কোন যোগ্যতায় পেয়েছিলেন? ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলে যোগ্যতায়!।’
আরো উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া তো তার দলের মধ্যে পুরোপুরি পরিবারতন্ত্র চালু করেছেন। তার বোন খুরশিদ জাহান হককে তিনি প্রথমে মহিলা দলের নেতৃত্ব দেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বানান এরপর তাকে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বানান। তার ভাই সাঈদ ইস্কান্দরকে তিনি এমপি বানান এবং দলে তার জন্য বিশেষ সম্পাদকের পদ তৈরী করা হয়েছিল। তার আরেক ভাই শামীম ইস্কান্দর কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও বিমানের ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করতেন।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার আরেক বোন ব্রুনাইতে থাকেন। তার ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউককে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এ পদে থেকে তিনি যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তেমনি অনেক কলংকেরও জন্ম দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি সরকারি বাড়ি দখল করেছিলেন। তার আরেক ভাই তুহিন নীলফামারী বিএনপির সভাপতি অর্থাৎ খালেদা জিয়ার ভাগ্নে।’ ‘এছাড়া আমরা একদিন সকাল বেলা দেখতে পেলাম, বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র জনাব তারেক রহমান হঠাৎ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি (তারেক রহমান) কোনো রাজনীতির মধ্যে ছিলেন না, ওয়ান ফাইন মর্নিং আমরা দেখলাম তিনি বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। এখন বিএনপি চেয়ারম্যান হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান। দু’জনই শাস্তিপ্রাপ্ত আসামী, দুর্নীতি এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়ে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নেই। আপনারা দেখেন নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুন রায় চৌধুরী, বাবা মেয়ে দুজনই বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তারপর, গয়েশ্বর বাবুও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং উনার ছেলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মির্জা আব্বাস বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি। পুরো পরিবারতন্ত্রের মধ্যে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যে কথাটি বলেছেন এটি তাদের দলের বেলায়ই প্রযোজ্য।’
‘আমাদের দলে কাউকে পারিবারিক কারণে কোনো পদ দেয়া হয় না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তারেক রহমান হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করেছিলেন। আমাদের দলে এ ধরণের কোনো কিছু হয়নি এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ও তিনবারের সংসদ সদস্য। জনপ্রিয়তার বিচারে, যোগ্যতার বিচারে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন, কোন বিচারে ইশরাক হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে? সুতরাং যে কথাটি তিনি বলেছেন, এটি বিএনপির বেলায় প্রযোজ্য, আমাদের দলে সেই চর্চা নাই।’
আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলে চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিনের পুত্র ব্যারিস্টার নওফেলকে পিতার মৃত্যুর পর দায়িত্ব দেয়া প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব এবং তৎপরবর্তিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তিনি তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। এই সিদ্ধান্ত যে সঠিক, সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন। এবং শেখ ফজলে শামস পরশের ব্যাপারেও আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করবেন পরশ একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। কেউ কেউ বলে যে, রাজনীতিতে শিক্ষিত মানুষের বড় অভাব। সেই ক্ষেত্রে আমি মনেকরি তার মতো একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিকে যুবলীগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটি সমুচিত পদক্ষেপ ছিল। এটি সারাদেশে প্রশসিংত হয়েছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি বেগম সুলতানা কামালের পরিবেশ নিয়ে এক বক্তব্য প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সুলতানা কামালের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে চাই, তিনি সবসময় কড়া কথা বলে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। যেভাবে ঢালাওভাবে কথাগুলো বলেছেন, তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত জরিপের ডাটা দেখার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলোর দিকে তাকালে তিনি নিশ্চয়ই তার ভুল বুঝতে পারবেন এবং বক্তব্যের জন্য লজ্জা পাবেন। সবিস্তার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে পরিবেশ গবেষক ও আওয়ামী লীগের প্রথম পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার আগে বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ১৮ শতাংশের কম। এখন বাংলাদেশে বৃক্ষআচ্ছাদিত এলাকা ২২.৪%। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমান ছিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার আগে ৯ শতাংশ, এখন সেটি ১২.৭ শতাংশ। আমরা যখন ২০০৯ সালের সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ শিল্প কারখানায় ইটিপি (এফফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট) ছিল, এখন সেটি ৮৫ শতাংশের বেশি শিল্প কারখানায় আছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল আপনারা একটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় দেখেছেন সুন্দরবনে কার্বন স্টক বেড়েছে। সুন্দরবনে আগে কার্বন স্টক ছিল ১০৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন এখন সুন্দরবনে কার্বন স্টক হচ্ছে ১৩৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। আমি সুলতানা কামালকে অনুরোধ জানাবো এই ‘ডাটা’গুলো দেখার জন্য। এগুলো আমার দেয়া ‘ডাটা’ নয়, বিভিন্ন স্বাধীন সংস্থা এই ডাটাগুলো তৈরি করেছেন। সুতরাং এগুলোর দিকে তাকালে তিনি তার ভূল বুঝতে পারবেন। সুলতানা কামাল নিজে দেখতে না পারলেও জাতিসংঘ কিন্তু লক্ষ্য করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার অর্থাৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা আসার পর রাজনীতিবিদরা এই সমস্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যে অনেক কাজ হয়েছে, সেটি বেগম সুলতানা কামাল লক্ষ্য না করলেও জাতিসংঘ লক্ষ্য করেছে। এই জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আপনারা জানেন জীববৈচিত্র সংরক্ষণকে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ওয়াইল্ড লাইফ এওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাপক বনায়ন করা হয়েছে। এবং একইসাথে পরিবেশ সংরক্ষণে যারা কাজ করে, তাদেরকে পুরস্কৃত করার জন্য ২০০৯ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক চালু করা হয়েছে। এবং এই জাতীয় পরিবেশ পদক আমরা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপাকেও দিয়েছি।’