বিএনপি সত্যিই ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে পারে কি না, জানতে চাই বিএনপি সত্যিকার অর্থে ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে পারে কি না, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৭, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

শেখ হাসিনা। বুধবার (২৭ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস -২০২৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে বলে দিয়েছে, ভারতের পণ্য ব্যবহার করবে না। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করেন। তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? তারা বউদের কাছ থেকে শাড়িগুলো এনে কেনো পুড়িয়ে দিচ্ছে না? আমি জানি, বিএনপির বহু মন্ত্রীর বউরা ওখানে গিয়ে শাড়ি কিনে এনে এখানে বেঁচতো। আমি বিএনপি নেতাদের বলবো, তাদের বউরা যেন ভারতীয় শাড়ি না পড়ে। যেদিন ওগুলো এনে অফিসের সামনে পোড়াবেন, সেদিন বিশ্বাস করবো, আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করলেন।তিনি বলেন, তাদের কারও পাকের ঘরে যেন ভারতীয় মশলা না দেখা যায়। এটা তারা করতে পারবে কি না? আপনারা রং ঢং করতে ওস্তাদ। সত্যিকার অর্থে বর্জন করছেন কি না, এটা জানতে চাই।

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপির এক নেতা বলছেন, গণতন্ত্র কোথায়? গণতন্ত্র আপনি দেখবেন কীভাবে। না দেখতে পারা তাদের মুদ্রাদোষ বলা যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী? গভর্নমেন্ট অফ দ্য দি পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল। এটাই তো। ক্যান্টনমেন্টের হাতে ক্ষমতা থাকলে গণতন্ত্র থাকবে? যাদের হাতে ডাণ্ডা আছে, তাদের হাতে ক্ষমতা থাকলে আপনারা ঠাণ্ডা? জনগণের হাতে ক্ষমতা থাকুক চান না?

তিনি বলেন, আমাদের কিছু আঁতেল আছে এদেশে। বুদ্ধিজীবী! বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করে যারা। বুদ্ধির অবশ্যই দরকার আছে। কারণ বুদ্ধি না হলে তো দেশ এগোতে পারবে না। জনগণের গণতন্ত্রে তারা বিশ্বাস করে না। কিছু অতিবাম ও অতিডান একসঙ্গে হয়ে গেছে। বিপ্লব করতে করতে দাঁড়িকমা সেমিকোলন হতে হতে তারা নিজেরাই শেষ।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ওপর আক্রমণ চালায়, সেই পাকিস্তানি আর্মির একজন কিন্তু জিয়াউর রহমান। সেও হামলা চালিয়েছে। একজন অফিসারের মাধ্যমে ঘোষণা দিলে বিশ্বাসযোগ্য হবে, এজন্য তাকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছিল। আমরা সবার অবদান স্বীকার করি। রেডিও’র ঘোষক আছে, টিভির ঘোষক আছে, এমনকি আজকের এই অনুষ্ঠানেরও তো ঘোষক আছে।

তিনি বলেন, আসলাম বেগ তো ঘোষণা দিয়েছে, জিয়াউর রহমানের কার্যক্রমে তারা সন্তুষ্ট। কেনো জানেন? সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধা হত্যা হয়েছে, জিয়াউর রহমানের সেক্টরে। সে কখনো যুদ্ধ পরিচালনাই করেনি, নিজেকে নিরাপদ জায়গায় রেখেছে। তার নেতৃত্বের অভাবেই এতবেশি হতাহত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিএনপি নেতারা বলে- ২৫ মার্চ নাকি আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে গিয়েছিল। তাহলে যুদ্ধটা করলো কে? বিজয়কে আনলো? মুজিব নগর সরকার গঠন করে শপথ নিয়ে তারা যুদ্ধ পরিচালনা করলো। সরকারপ্রধান ছিল শেখ মুজিবুর রহমান। তার গ্রেফতারের পর উপরাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে সেই সরকারের অধীনে এদেশে যুদ্ধ হলো। যারা বলছে, পালিয়ে গেলো- তাহলে যুদ্ধটা করলো কে? আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে জিয়াউর রহমান তো বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে চাকরি করেছে। সামরিক অফিসার হিসেবে সে এখানে দায়িত্ব পালন করেছে। সে যে মেজর থেকে মেজর জেনারেল হলো, সেটা কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। এটাও অকৃতজ্ঞরা ভুলে যায়।

‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশ তো এক কদম এগোতে পারেনি। আমি বলি, এক কদম এগোতে দেওয়া হয়নি’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা প্রতিবেশিসহ অনেক দেশের সহায়তকা পেয়েছি। আবার পেয়েছি, অনেক বড় বড় দেশের বৈরিতা। অবশ্য, সে দেশের নাগরিকদের সমর্থনও পেয়েছি। যারা আমাদের স্বাধীনতায় সহায়তা করেছে, তাদের আমরা সম্মানিত করেছি, স্বীকৃতি দিয়েছি। একমাত্র বাংলাদেশই এটা করেছে। এতে বাংলাদেশও সম্মানিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ বলছে, গণতন্ত্র নাই। দেশের কোনো উন্নতিই হয়নি। স্বাধীনতার পরও এমন কিছু কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি। জাতির পিতাকে সময় দেয়নি। স্বাধীন হওয়ার পরই শুরু হয়ে গেলো সমালোচনা। নতুন বিপ্লবসহ নানা ধরনের কথা। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল-মানুষের মন থেকে জাতির পিতাকে মুছে ফেলা। সফল হয়নি। যার কারণে তাকে থামিয়ে দিতে হত্যার পথ বেছে নেয়।

তিনি বলেন, একটি জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বিজয় এনে দেওয়া জাতির পিতার মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছিল বলে সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা, সবই তিনি করেছেন। এই জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার করেছি, এর ২৯ বছর ছিল জাতির দুর্ভাগ্যের। স্বাধীনতার পর পরই মাত্র তিন বছরে একটি স্বল্পোন্নোত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন শেখ মুজিব। আইন, নীতিমালাসহ সবকিছু করে দিয়ে যান। একটি সংবিধান আমাদের উপহার দিয়েছেন। এতে আমাদের প্রতিটি অধিকারের কথা বলা আছে।

আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, দলের স্বাস্থ্য সম্পাদক ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি প্রমুখ।