নিজস্ব প্রতিবেদক:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটিতে নাম প্রস্তাব করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠনে নিবন্ধিত ১৭ দলের সবাই পাঁচের অধিক নাম প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও তাদের পছন্দের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলে নতুন ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটির কাছে তিন শতাধিক নাম এসেছে। এসব প্রস্তাবে ঘুরেফিরে তিন সাবেক সচিবের নামই বেশি উল্লেখ করেছেন বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম এবং সমালোচিত আজিজ কমিশনের সময় ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পালনকারী ড. মোহাম্মদ জকরিয়া। নাসির উদ্দিন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান। ৭৬ বছর বয়সী শফিকুল ইসলাম অনেক আগেই অবসর নিয়েছেন। তবে ড. মোহাম্মদ জকরিয়ার নামই বেশি আলোচিত। নির্বাচন কমিশনেও তাঁর নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আনোয়ার হোসেনের নামও প্রস্তাব করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খানের নাম প্রস্তাব করেছে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক তিন দল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বেশির ভাগ দল তাদের তালিকায় সুশীল সমাজ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিচারক, শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও নারী প্রতিনিধির নাম উল্লেখ করেছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে একটি তালিকা সমমনা দলগুলোকে দেওয়া হয়। সেখান থেকে পছন্দ অনুযায়ী নাম প্রস্তাবের জন্য বলা হয়। সেই তালিকা থেকে কয়েকটি নাম অন্তর্ভুক্ত করে ওই সব দল নিজেদের মতো করে তালিকা করে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা মুখ খুলতে নারাজ। আবার আরেকটি পক্ষ দাবি করে, তালিকা নিয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগই হয়নি। তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে তালিকা চূড়ান্ত করেছেন। সেখানে কাকতালীয়ভাবে অনেকের নাম মিলে যেতে পারে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সমকালকে জানান, তারা নিজেদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এবং সবার সিদ্ধান্ত মতে তালিকা করে জমা দিয়েছেন। সেখানে বিএনপি বা কারও নামের সঙ্গে মিলে গেলে, সেটা কাকতালীয়।
গত বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে বিএনপির পক্ষ থেকে নামের তালিকা জমা দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। গতকাল শনিবার রাতে এ্যানী বলেন, আমরা বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চায়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দিয়েছি।
একই দিন ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও নামের তালিকা জমা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বেশির ভাগ দল, সংগঠন ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে নামের প্রস্তাব দেওয়া হয় গত বৃহস্পতিবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন কমিশনার পদের জন্য আটজনের নাম প্রস্তাব করে জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও এলডিপি পৃথকভাবে নাম প্রস্তাব করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। পাঁচটি পদের জন্য পাঁচজনের নাম প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপকসহ মোট ছয়জনের নাম প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ অন্য অনিবন্ধিত দলের পক্ষ থেকেও নামের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নাম প্রস্তাব করার শেষ দিন ছিল গত বৃহস্পতিবার। অন্তর্র্বতী সরকারের গঠিত অনুসন্ধান কমিটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে নাম প্রস্তাব করার জন্য রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির কাছে কোনো নাম চায়নি অনুসন্ধান কমিটি। এসব দল বাদে বিএনপিসহ ১৭টি দল ও জোট, পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই নাম জমা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। আইন অনুযায়ী, ২১ নভেম্বরের মধ্যে সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন– নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান, মহিবুল হক, শফিকুল ইসলাম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতিদার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও রুহুল আমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম হাসান তালুকদার এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী, ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন; সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমেদ, ড. এ ওয়াই এম একরামুল হক, মুনির চৌধুরী এবং সাবেক যুগ্ম সচিব আরিফুর রহমান; সাবেক আমলা শামীমা আহমেদ, মঞ্জুর কাদির, শাহনাজ বানু এবং সাবেক জেলা জজ শামীম আহমেদ ও এস এম নুরুজ্জামান প্রমুখ।