বিকেএসপি ছেড়ে এনএসসি আসতে চান কোচরা

প্রকাশিত: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক :

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম আতুড়ঘর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, অ্যাথলেটিক্স, জুডো, কারাতে, টিটি, আরচ্যারিসহ বিভিন্ন খেলার জাতীয়-আন্তর্জাতিক তারকার কারিগর বিকেএসপির কোচরা। বেশ কয়েকজন কোচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কোচ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সেক্রেটারি ফেডারেশন) পদে আবেদন করেছেন।

জাতীয় হকি দলের সাবেক দুই তারকা খেলোয়াড় ও কোচ মওদুদুর রহমান শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব, সাবেক টিটি তারকা ও কোচ খন্দকার মোস্তফা বিল্লাহ, জুডো কোচ আসাদুজ্জামান খান বাধন, অ্যাথলেটিক্সের শাহাদাত হোসেন ভূইয়া ও মোবারক হোসেন, কারাতে হোসেন খান, ভলিবলের শফিকুর রহমান রাসেল, সোলেমানসহ আরও কয়েকজন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচ পদে আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে আবার বিপ্লব, শুভ, মোস্তফা বিল্লাহ, শফিকুর রহমান, মোবারক, আসাদুজ্জামান প্রশাসনিক কমকর্তা পদেও আবেদন করেছেন।

হকি কোচ মওদুদুর রহমান শুভ বিকেএসপির কোচ হিসেবে কাজ করছেন প্রায় এক দশকের বেশি সময়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আবেদনের কারণ সম্পর্কে সাবেক এই তারকা বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় ও কোচের জন্য আদর্শ জায়গা অবশ্যই বিকেএসপি। কিন্তু কোচদের অবসর পরবর্তী জীবনে তেমন নিশ্চয়তা নেই বিকেএসপিতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে কোচরা অবসরের পর প্রভিডেন্ট ফান্ড সুবিধা পেয়ে থাকে। বিকেএসপিতে কোচরা নবম গ্রেডে যোগদান করে। এরপর পদোন্নতি পেতে দেড় যুগও লেগে যায়।’

বিকেএসপিতে কোচরা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দশম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণী)। এক গ্রেড অবনমন করেও বিকেএসপি থেকে অনেক কোচ এখানে আসতে চান অবসরকালীন সুবিধা ও নিয়মিত পদোন্নতি পাওয়ার জন্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সম্প্রতি ৪২ টি শূন্য পদ পূরণের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৬ টি কোচ পদে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারটি প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সেক্রেটারি ফেডারেশন)। কোচ দ্বিতীয় শ্রেণী হলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবার প্রথম শ্রেণীর। তাই বিকেএসপির বেশ কয়েকজন কোচ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদেও আবেদন করেছেন।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীর বয়সসীমা ৩২ বছর। বিকেএসপি থেকে যে সকল কোচ আবেদন করেছেন দুই-একজন বাদে বাকি সবাই এই বয়সসীমার উর্ধ্বে। এরপরও আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সাবেক টিটি তারকা ও এক যুগ বিকেএসপিতে কোচ হিসেবে কাজ করা মোস্তফা বিল্লাহ,‘ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও অন্যতম বড় অংশীদার। বিকেএসপি ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দুই প্রতিষ্ঠানই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলী সংশোধন পরিবর্তনের এখতিয়ার রাখে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রয়োজন বোধ করলে আমাদের আবেদন বিবেচনা করতে পারে আবান নাও পারে।’

১৫ জানুয়ারি ছিল আবেদনের শেষ সময়। যারা সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদনের শেষ দিন ছিল গত পরশু। বিকএেসপির কোচরা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আবেদন করেছে এবং আবেদনের সঙ্গে আবেদন করার অনুমতি পত্রও সংযুক্ত করেছে।

সাবেক দ্রততম মানব ও কৃতি অ্যাথলেটিক্স কোচ বিকেএসপি ছেড়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগে যোগদান করেছেন বছর দু’য়েক আগে। পদোন্নতিতে দীর্ঘসূত্রিতা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড না থাকাতেই মূলত বিকেএসপি ছাড়তে চান কোচরা। অনেক দিন থেকেই বিকেএসপির কোচরা এই সংকটে ভুগছেন। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই সংকট সমাধান না করলে অনেক মেধাবী কোচই বিকেএসপি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হবেন। ফলে বিকেএসপি থেকে আগামীতে ভালো মানের খেলোয়াড় পাওয়া আরো দুরূহ হবে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া পরিদপ্তর ও বিকেএসপি। তিন প্রতিষ্ঠানই ক্রীড়া নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে। পরিদপ্তরে ক্রীড়া অফিসারদের যোগদান নবম গ্রেডে (প্রথম শ্রেণী) এবং অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। বিকেএসপিতে কোচদের যোগদান নবম গ্রেডে (প্রথম শ্রেণী) হলেও রয়েছে পদোন্নতি জট ও নেই অবসরকালীন সুবিধা। আবার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অবসরকালীন সুবিধা থাকলেও যোগদান দশম গ্রেডে (দ্বিতীয় শ্রেণী)। একই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ তিন প্রতিষ্ঠানে কোচ/ক্রীড়া অফিসার পদে তিন রকম চিত্র। ক্রীড়াঙ্গনের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য এই সংক্রান্ত বিষয়ে সাম্যতা নির্ধারণে সমন্বয় ও পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে ধারণা ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের।