বিক্রয়ডটকমে পণ্য ধরিয়ে দিয়ে বিক্রেতা উধাও, দায় শুধু ক্রেতার!

প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪

সেলিনা আক্তার :

একটা কম দামি মোবাইল খুঁজতে গিয়ে বিক্রয়ডটকমে ঢুকলেন রেশমা। ব্যবহৃত একটি মোবাইল ৯ হাজার টাকা দিয়ে কিনে যেই না ব্যবহার শুরু করলেন, তখনি অপরিচিত নম্বর থেকে কল। পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) কল করে বলেন, মোবাইলটি ছিনতাই হয়েছিল এবং এখনই ফেরত দিতে হবে। কারণ এই মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডি করা আছে।

এবার ক্রেতা কল করলেন সেই বিক্রেতাকে। ততক্ষণে বিক্রেতার ফোন নম্বর তো বটেই, যোগাযোগের সব রাস্তা বন্ধ। উপায়ান্তর না দেখে রাত ১০টায় স্থানীয় থানায় গিয়ে ক্রেতা সেই মোবাইল ফেরত দিয়ে আসেন। থানায় তার ছবি তোলা হয়। তিনি মামলাসহ আরও কী কী হয়রানির মুখে পড়তে পারতেন, সেই ব্যাখ্যাও জানানো হয়।

ক্রেতা রেশমার সরল প্রশ্ন, কোনও একটি প্রতিষ্ঠান যখন অন্যদের পণ্য বিক্রির প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করে দেয়, সেই পণ্য নিয়ে কোনও মামলা বা গরমিল আছে কি না, সেটা যাচাই করা কেন তাদের দায়িত্ব হবে না?

যদিও বিক্রয়ডটকম বলছে, ফোন কেনার সময় বক্স ইএমআই নম্বরসহ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

এই ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে এবার আরেক ভুক্তভোগী কী বলেন দেখি। রবিন একটি আইফোন-৫ কিনেছিলেন। ফোনের বক্স, চার্জারসহ নতুন। এক মাস পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে কল করে বলা হয়, ফোনটি একটি মামলার এভিডেন্স, জমা দিতে হবে। তিনিও বিক্রেতাকে আর পাননি এবং ফেরত দিয়ে আসতে বাধ্য হন।

ব্যবহৃত একটি গাড়ি কিনবেন বলে সেখানে ঢুকে ই-নাইনটি সিরিজের একটি কার পছন্দ করেন রুবেল। কাগজ ঠিক আছে, গাড়ির নামে কোনও মামলা নেই। গাড়িটি চট্টগ্রামের। তিন লাখ টাকা এবং ঢাকায় আসার খরচসহ দাম নির্ধারণ হয়। ৩০ শতাংশ দাম বিকাশে পাঠানো হয়। বাকিটা গাড়ি পাওয়ার পর। নির্ধারিত দিনের চার দিন পর রাত ১১টায় ঢাকায় ক্রেতার বাসায় গাড়ি হাজির। বিক্রয় চুক্তিপত্রের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন হয়। সেই গাড়ি চলেছিল দেড় সপ্তাহ। এর মধ্যেই রাস্তায় সার্জেন্ট গাড়ি থামালে মালিক বুঝতে পারেন তার কাগজ ভুয়া। এর দুই দিন পর গাড়ি বন্ধ। সেই ইঞ্জিন দিয়ে আর এক দিনও গাড়ি চালানো যায়নি। এই সময় বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি, যে বাসার ঠিকানা ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছিল, সেটাও ভুয়া জানা যায়।

বিক্রয়ডটকম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস দাবি করে তারা তাদের ওয়েবসাইটে লিখে রেখেছে, ‘ইরশৎড়ু মূলত এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি প্রায় সবকিছুই কেনাবেচা করতে পারবেন! আমরা ব্যবহারকারীদের গাড়ি থেকে শুরু করে প্রপার্টি, চাকরি খোঁজ বা নিয়োগ, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিকস গ্যাজেটস এবং অন্যান্য জিনিস কেনাবেচা করতে সহায়তা করে থাকি। ৫০টিরও বেশি ভিন্ন ক্যাটাগরি নিয়ে গ্রাহকদের জন্য আমরা নিশ্চিত করি নিরাপদ, স্মার্ট ও সহজ সল্যুশন।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিক্রয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেনাবেচা ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে হয়। আমাদের এখানে কিছু করার নেই। আমরা বিক্রেতার ইনফো/ফোন নম্বর ভেরিফাই করি। তবে যদি পুলিশ কেস হয় এবং আমাদের বললে ডেটা দিয়ে সহযোগিতা করি।

প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং আরেফিন হোসেইন বলেন, অনলাইনে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বিক্রয়ডটকম সব সময়ই সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়। যা আমাদের প্ল্যাটফর্মের প্রতি বিজ্ঞাপনের পাশে প্রদর্শিত হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনও ঘটনার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে থাকি। যেকোনও ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে আমাদের সতর্কতা আছে। আমরা প্রতি বিজ্ঞাপন ম্যানুয়ালি দেখে থাকি। অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমাদের পরামর্শ হলো সমস্যা আমাদের দ্রুত জানান, সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে।

মার্কেটপ্লেস যার, তাকে দায় নিতে হবে উল্লেখ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, তাকে অবশ্যই পণ্যের অথেনটিসিটি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ পণ্য দিলো আর সে উঠিয়ে দিলো, তা হতে পারে না। আমি যদি ক্রেতা হয়ে থাকি আমি কীভাবে জানবো পণ্যটি চোরাই কি না? যারা মার্কেটপ্লেস দিয়েছে, দায় তাদের নিতে হবে।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীরা যদি আমাদের এখানে অভিযোগ করে, তবে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করবো।