নীলফামারী প্রতিনিধি:
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কারফিউয়ের কারণে দেশের দ্বিতীয় ও উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় আড়ৎ সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দরে বেচা-কেনা কমেছে। এছাড়া পোকা লেগে নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি। শুঁটকি বন্দরের ব্যবসায়ীদের দাবি বেচা-কেনা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
গত ২৩ জুলাই জেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেওয়ায় সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দরের আড়ৎগুলোর দুয়ার খুলে ২৪ জুলাই সকাল থেকে। তবে যানবাহন চলাচল কম থাকায় আড়তে আসতে পারছে না দূরদূরান্তের ক্রেতারা। ফলে ক্রেতাশূন্য আড়তে লোকসান গুণতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরকে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালুর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি ব্যবসায়ী ও আড়ৎ মালিকরা।
সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দরে খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শুঁটকি এনে সরবরাহ হয় আশপাশের জেলায়। এখান থেকে রপ্তানি হয় ভারতেও। এই বন্দরে শুঁটকি ব্যবসা শুরু ১৯৮৩ সালে। দিনে দিনে বেড়েছে পরিধি। বর্তমানে ১৩টি আড়ৎ ও ৫৪টি খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সৈয়দপুর শুঁটকি বন্দরে। এখানে কাজ করেন হাজার খানেক শ্রমিক। ৫০ থেকে ৬০ প্রকারের মাছের শুঁটকি পাওয়া যায় এখানে। খুলনা, পাবনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে সামুদ্রিক ও মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি এনে বিক্রি করা হয় সৈয়দপুর আড়তে। দূরদূরান্ত থেকে আসেন ক্রেতারা। কিন্তু কোটা আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে সারা দেশে জারি করা কারফিউয়ের কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে শুঁটকি আড়তের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
এই বন্দরে একটি শুঁটকি হিমাগার করার দাবি দীর্ঘদিনের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি শুঁটকি হিমাগার থাকলে যেকোনো দুর্যোগে লোকসানে পড়তে হবে না তাদের। এছাড়া কোটা আন্দোলন ও কারফিউ চলাকালীন ক্ষতি পোষাতে এক সপ্তাহের ব্যাংক কমিশন মওকুফের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সৈয়দপুর শুঁটকি আড়তের সাধারণ ব্যবসায়ী মোমিনুর রহমান বলেন, আন্দোলন ও কারফিউয়ের কারণে চরম ক্ষতি হয়েছে। আমরা এক সপ্তাহের মতো দোকান খুলতে পারিনি। কারফিউ শিথিলের পর থেকে একটু খুলছি। কিন্তু পুরোপুরি খুলতে পারছি না। আমাদের ৫ পারসেন্টও বিক্রি হয় না এখন। দোকান খুলে সারাদিনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। অথচ আগে ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। এরকম হলে কেমন করে চলব আমরা। আমাদের দাবি দ্রুত সব কিছু স্বাভাবিক হোক।
আহম্মেদ আলী অ্যান্ড সন্সের ম্যানেজার ইমরান আলী বলেন, কারফিউয়ে যানবাহন চলাচল না থাকায় সাধারণ ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। সঠিক সময় যদি শুঁটকি পৌঁছানো না যায় তাহলে নষ্টের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের এখানে হিমাগারও নাই। হিমাগার থাকলে শুঁটকি নষ্ট হতো না। বর্তমানে কোনো বেচাবিক্রি নেই, কর্মচারীদের বসে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে।
সৈয়দপুর শুঁটকি মাছের আড়ৎ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার শেখ বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের প্রতিদিন প্রায় ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। পরিবহন বন্ধের কারণে শুঁটকি বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পোকা লেগে যাচ্ছে। বিক্রি না করায় প্রতিদিন রোদে দিতে হচ্ছে আলাদা করতে হচ্ছে এজন্য আবার লেবার লাগছে। এরপরেও নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিক্রি নেই তার ওপরে আবার অতিরিক্ত লেবার খরচ। সব মিলে ভীষণ লোকসানের মুখে আমরা। এছাড়া ব্যাংক তো আমাদের কাছ থেকে ইন্টারেস্ট নেওয়া বন্ধ করেনি। কমপক্ষে এক সপ্তাহের ইন্টারেস্ট মওকুফ করলে আমরা খুব উপকৃত হইতাম।