সেলিনা আক্তার:
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করলেও প্রশাসকের দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিঘ্নের সৃষ্টি করছে একটি মহল । একটি বিতর্কিত ভোটার তালিকার মাধ্যমে নির্বাচিত বিগত কমিটিকে সরিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৫ আগস্টের পরে সংগঠনটিতে প্রশাসক নিয়োগ করে। প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু সেটিতে একটি মহল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মালিক পক্ষের অনেকে।
প্রসঙ্গত, বিজিএমইএর বিগত কয়েকটি নির্বাচনের ভোটার তালিকায় এমন কিছু কারখানার নাম যুক্ত করা হয় যেগুলোর কারখানার কোনো অস্তিত্ব ছিল না । কারো কারো কারখানা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। মূলত নির্বাচনে একটি পক্ষ সুবিধা নেওয়ার জন্য এ কাজটি করেছে বলে তখন অভিযোগ উঠে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংগঠনটিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনকে বিজিএমইএর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করে সরকার। দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বের করে দিয়ে বিজিএমইএকে প্রকৃত মালিকদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার কাজে মন দেন।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো (যাদের কারখানা নেই এবং রপ্তানিতে নেই) বের করার জন্য হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-কে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করার পর অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানগুলো (১০টি কারখানার মালিক) ভীত হয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন দায়ের করে। রিট পিটিশন শুনানির অপেক্ষায় থাকার মধ্যেই তারা প্রশাসকের কাছে হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর কার্যক্রম বন্ধের দাবি করে। এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে— বিজিএমইএকে প্রকৃত মালিকদের সংগঠন হিসেবে দাঁড় করানো। এ কাজের ক্ষেত্রে কারা কী করল, সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়।’
এদিকে বিজিএমইএর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মালিকদের কেউ কেউ রীতিমতো সভা করে সংগঠনটিতে প্রশাসক নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা করে আসছেন। সম্প্রতি তারা চট্টগ্রামে সভা করে প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা করে অনতিবিলম্বে নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান। এ লক্ষ্যে তারা চট্টগ্রাম থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
পোশাক শিল্প মালিকদের কেউ কেউ বলছেন, বিগত সময়ে ভুয়া ভোটার তালিকায় যে নির্বাচন হয়েছে তা বহাল রাখার জন্য একটি পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে । তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে চায় না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে বিতর্কিত করার জন্য তারা এমনটি করছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মার্চ মাসে বিজিএমইএর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে সম্মিলিত পরিষদ এবং ফোরাম নামে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সে নির্বাচনে ভোটার তালিকা থেকে ভুয়া সদস্যদের বাদ দিতে ফোরামের পক্ষ থেকে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যাবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের অফিসে আপত্তি দেওয়া হলেও সেগুলো নিস্পত্তি না করে নির্বাচন শেষ করা হয়।
এ বিষয়ে ফোরামের তৎকালীন প্যানেল লিডার এবং সাবেক ভাইস- প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ ইত্তেফাককে বলেন, প্রক্রিয়ার বাইরে কারো থাকা উচিত না। প্রশাসক যে প্রক্রিয়ায় গেছেন তার দরকার ছিল। একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা না থাকলে আবার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে। ডিরেক্টরেট অব ট্রেড অরগানইজেশন এবং এনবিআরের রুলসে এ বলা আছে যে এই সংগঠনের সদস্য হতে হলে তার একটি বৈধ টিআইএন থাকতে হবে। আয়কর জমা থাকতে হবে। বিজিএমইএর প্রশাসক সেটাই ফলো করছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে অডিট করা হচ্ছে। যারা এ নিয়ে রিট করেছেন তারা সত্যকে ঢেকে রেখে আগের মতো নির্বাচন করতে চাচ্ছে বিজিএমইএ যদি প্রকৃত সদস্যদের হয়ে থাকে তাহলে কারো আপত্তি থাকবে কেন?