বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেন। এতে বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন।
বিএসএফ মহাপরিচালক বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর মাধ্যমে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিএসএফ মহাপরিচালককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফের সমন্বিত যৌথ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের মধ্যে রয়েছে- বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বিএসএফ/ভারতীয় নাগরিক/দুর্বৃত্ত কর্তৃক বাংলাদেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা/আহত/মারধরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অধিক কার্যকরী উদ্যোগ হিসেবে সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাসমূহে রাত্রিকালীন যৌথ টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হয়। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও বেগবান করা, যথার্থ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক আশা প্রকাশ করে বলেন, বিজিবি ও বিএসএফ সীমান্ত হত্যার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখতে এবং অপরাধীদেরকে হত্যার পরিবর্তে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।
এ সময় সীমান্তে হত্যার ঘটনা অদূর ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে বলে বিএসএফ মহাপরিচালক আশ্বাস প্রদান করেন। সীমান্তে মানবাধিকার রক্ষা ও সহিংসতা রোধে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষই সীমান্তে জনসচেতনতা কর্মসূচি জোরদারকরণ, দুর্গম অঞ্চলে যথাযথ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সমন্বিত টহল বৃদ্ধি করে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সম্মত হয়।
বিজিবি মহাপরিচালক সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, যেমন- মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বিশেষ করে ইয়াবা পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, গবাদি পশু, জাল নোট, স্বর্ণ প্রভৃতি চোরাচালানের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এসব অপরাধ দমনের জন্য বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাকেশ আস্তানা বলেন, অবৈধ মাদক পাচারের ফলে উভয় দেশের যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি মারাত্মকভাবে বেড়েছে, যা উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক এবং এটাকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার। এ ব্যাপারে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে, চোরাকারবারীদের সম্পর্কিত এমন তাৎক্ষণিক ও প্রয়োজনীয় তথ্য পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান এবং প্রয়োজনে যৌথ অভিযান পরিচালনার ব্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হয়।
প্রচলিত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে ভারতীয় নাগরিক এবং বিএসএফ সদস্যরা প্রায়শই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে, যা দুটি বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে বিএসএফের সহযোগিতা কামনা করেন। উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম/সীমানা লঙ্ঘন থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে এবং একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সীমান্তের নিয়মনীতি বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেয়া হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সম্মেলন (ভার্চুয়ালি) অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজশাহী জেলার পদ্মা নদীর ১.৩ কিলোমিটার ‘ইনোসেন্ট প্যাসেজের’ অনুরোধ বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। বিএসএফ মহাপরিচালককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। বিএসএফ মহাপরিচালক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।
তিনি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আস্তানার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এই আস্তানাগুলো ধ্বংস করার জন্য অনুরোধ করেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র কথা উল্লেখ করে বিএসএফ মহাপরিচালক ওইসব আস্তানার (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।