বিটিআরসির গণশুনানিতে মোবাইল অপারেটরদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই

প্রকাশিত: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলামঃ 

গ্রাহকের অজান্তে মোবাইল ফোনের ব্যালান্স কেটে নেওয়া, কল ড্রপ (কথা বলার সময় হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন), দুর্বল নেটওয়ার্কসহ শত শত অভিযোগ উঠেছে অপারেটরদের বিরুদ্ধে। উঠেছে বিভিন্ন প্যাকেজের (ভয়েস ও ডেটা বান্ডেল) অতিরিক্ত মূল্য, ইন্টারনেটের ধীরগতি, এলাকাভিত্তিক অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের ক্ষমতার দাপট, সাইবার অপরাধের কথাও।

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) মিলনায়তনে টেলিযোগাযোগ সেবা ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে এক গণশুনানিতে এসব অভিযোগ তোলেন গ্রাহকরা।

বিটিআরসি আয়োজিত এই গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সরাসরি অংশ নেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেন গ্রাহকরা। বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, এবার শুনানিতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩ হাজার ২৫ গ্রাহক নিবন্ধন করেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় চার গুণের বেশি।

গণশুনানিতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে। মোবাইল অপারেটরটির একাধিক গ্রাহক জানান, মোবাইলে টাকা রিচার্জ করার পর এর মেয়াদ শেষ হলে অব্যবহৃত টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। জবাবে বিটিআরসি জানায়, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পর গ্রামীণফোনকে অব্যবহৃত ব্যালান্স না কাটতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও বলা হবে। এ ছাড়া শিগগির এ-সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা হবে।এ সময় প্রতিমন্ত্রী পলক গ্রাহকের অজান্তে অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ বা ব্যালান্স কোনো মোবাইল অপারেটর বা কোম্পানি যাতে কেটে না নিতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেন।

আমিনুল ইসলাম নামে ঢাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, তরঙ্গ বরাদ্দের পরও অপারেটরগুলো যথাসময়ে রোলআউট না করায় গ্রাহক মানসম্মত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল বলেন, অপারেটরদের যথাসময়ে তরঙ্গ রোলআউটের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্কের মান বাড়বে।

ঝিনাইদহ থেকে অনলাইনে অংশ নিয়ে ইমরান হোসেন নামে এক গ্রাহক প্রত্যন্ত এলাকার সিমের মালিকানা পরিবর্তন, এমএনপিসহ টেলিযোগাযোগের সব সেবা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে দেওয়ার দাবি তোলেন। এ বিষয়ে সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেন, সিমের মালিকানা পরিবর্তন ও এমএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয় বিধায় তা এজেন্ট পয়েন্টের মাধ্যমে সম্ভব হয় না। ভবিষ্যতে মোবাইল অপারেটর-সংক্রান্ত সব সেবা অনলাইনে দেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

ধানমন্ডির ব্যবসায়ী নাহিয়ান তাঁর বাসায় মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ করলে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব এলাকায় বহুতল অবকাঠামো রয়েছে, সেখানে নেটওয়ার্ক কাভারেজ সহজে প্রবেশ করতে পারে না। অপারেটরগুলো নতুন সাইট স্থাপন করতে চাইলেও জনগণ অনুমতি না দেওয়ায় পর্যাপ্ত সাইট স্থাপন করা যাচ্ছে না। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি এরই মধ্যে টাওয়ার শেয়ারিং চালু করেছে। এর ফলে এক টাওয়ার থেকে সব অপারেটর সেবা নিতে পারবে।

কেরানীগঞ্জ থেকে অনলাইনে যোগ দিয়ে রাসেল জানতে চান, বর্তমানে যেসব অনিবন্ধিত ফোন রয়েছে, তা কি বন্ধ হয়ে যাবে? জবাবে স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, যেসব অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন সচল রয়েছে, সেগুলো বন্ধের প্রয়োজন হলে গ্রাহককে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।

রাজধানীর খিলগাঁও থেকে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তাঁর এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অবৈধভাবে ইন্টারনেট সেবা দেন। বৈধ লাইসেন্সধারী ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে (আইএসপি) ওই এলাকায় ব্যবসা করতে দিচ্ছেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলেরও কার্যক্রম নেই।পরে শুনানির সময়ই প্রতিমন্ত্রী পলক খিলগাঁও বিটিসিএল অফিসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) ফোন করেন। তিনি তিন ঘণ্টার মধ্যে সংযোগ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকদের এলাকা সরেজমিন করে তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।