ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর বলেই ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছিল ওয়ানডেতে ঠাসা। আর ২০২৪ সালে যেহেতু টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, স্বাভাবিকভাবেই নতুন বছরটা হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের। জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেদিকে চোখ রেখে বছরের শুরু থেকেই ২০ ওভারের ক্রিকেটে মনোযোগ থাকবে দলগুলোর। আর বাংলাদেশের ক্রিকেট তো বছরটা শুরুই করছে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএল দিয়ে।
গত রাতে নিউজিল্যান্ড সফর শেষে ঢাকায় ফিরেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সপ্তাহখানেক বিশ্রামের পর ১৯ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া বিপিএলের প্রস্তুতি শুরু করবেন সবাই। বিপিএলের দশম আসরে ভেন্যু বরাবরের মতোই ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট; দলও ৭টি। বিপিএলের গত কয়েকটি আসরের সঙ্গে এবারের পার্থক্য অন্য জায়গায়। অনেক বছর পর এবার আবার প্রায় প্রতিটি দলেই দেখা যাবে বড় বড় বিদেশি তারকাকে। কয়েকটি দলে তারকার ভিড় এতটাই যে, একাদশে কাকে রেখে কাকে খেলানো হবে, সে মধুর সমস্যায়ও পড়তে হতে পারে তাদের।
রংপুর রাইডার্সের কথাই ধরুন। গত দুই বিপিএল ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলা সাকিব আল হাসান এবার খেলবেন রংপুরে। আর বিদেশি তারকা? পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার বাবর আজমের সঙ্গে থাকবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান ও শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। মাথিসা পাতিরানা, ব্রেন্ডন কিং, আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের মতো টি-টোয়েন্টির পরিচিত মুখেরাও খেলবেন রংপুরের হয়ে। বিদেশি তারকা দিয়ে দল সাজালেও রংপুরকে শুধুই বিদেশিনির্ভর দল মনে করেন না দলের প্রধান কোচ সোহেল ইসলাম, ‘আমাদের দলে অনেক তারকা আছে ঠিকই, তবে আমরা সেভাবে ভাবতে চাই না। বড় খেলোয়াড় এলে ভালো। কিন্তু টুর্নামেন্ট জিততে হলে স্থানীয়দের পারফরম্যান্সটা গুরুত্বপূর্ণ।’
গতবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের তারকা ক্রিকেটারদের তালিকা আরও দীর্ঘ। কুমিল্লার হয়ে গত বিপিএলে খেলা পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এবারও পাচ্ছেন লিটন দাসেরা। ইংল্যান্ডের মঈন আলী, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন খেলবেন কুমিল্লায়। পাকিস্তানের নাসিম শাহ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহকেও ধরে রেখেছে দলটি। বেঞ্চের শক্তি বাড়াবেন জনসন চার্লস, রাকিম কর্নওয়ালের মতো ক্যারিবীয় তারকারা।
ফরচুন বরিশাল এ বছরের জন্য তামিম ইকবালের সঙ্গে চুক্তি করেছে। দলটির বিদেশিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, শোয়েব মালিক, ফখর জামান ও আব্বাস আফ্রিদি উল্লেখযোগ্য। আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরান ও আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিংকেও পাচ্ছে বরিশাল। তবে পাকিস্তানিদের ওপর নির্ভরতা বরিশালের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রাথমিক সূচি অনুযায়ী বিপিএল শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৩ জানুয়ারি থেকে। এক সপ্তাহ পিছিয়ে এখন ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে বলে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের বেশি সময় পাবে না বরিশাল। পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি লিগ পিএসএল শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি। তার আগেই আমির-শোয়েবরা বিপিএল ছাড়বেন। বরিশালের মালিক মিজানুর রহমান তাই এখন পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের বিকল্প খুঁজছেন, ‘একটু সমস্যা হচ্ছে, তবে সমাধানও নিশ্চয়ই আছে। আমরা বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করছি।’ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার তারকাদের নিয়ে দল সাজিয়েছে খুলনা টাইগার্স। গতবার খুলনায় খেলা শাই হোপ আছেন এবারও। সঙ্গে যোগ হয়েছেন এভিন লুইস। পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ, শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা খেলবেন খুলনার হয়ে। বিদেশিনির্ভরতা থাকবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সেরও। তাদের আছেন শ্রীলঙ্কার তারকা ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস।
পাকিস্তানের দুই তরুণ ব্যাটসম্যান আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ হারিসকে দেখা যাবে চট্টগ্রামের জার্সিতে। নাজিবুল্লাহ জাদরান, কার্টিস ক্যাম্ফার তাদের মিডল অর্ডারের ভরসা। চট্টগ্রামের মালিক কে এম রিফাতুজ্জামান এবারের দল নিয়ে বেশ আশাবাদী, ‘এবার দল সাজানোর জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছি। যে কারণে অন্য লিগের সঙ্গে সূচির চ্যালেঞ্জ থাকার পরও যাদের চেয়েছি তাদের নিতে পেরেছি। আশা করছি, আমরা সমর্থকদের ভালো খেলা উপহার দিতে পারব।’গত বিপিএলের চমক সিলেট স্ট্রাইকার্স সাফল্য পেয়েছে স্থানীয় ক্রিকেটারদের সৌজন্যে। এবারও স্থানীয় খেলোয়াড়েই ভরসা তাদের। মাশরাফি বিন মুর্তজা দলে থাকলেও এ মৌসুমে দলটির নেতৃত্ব দেওয়ার কথা নাজমুল হোসেনের। বিদেশিদের মধ্যে গতবার খেলে যাওয়া রায়ান বার্ল এবারও খেলবেন সিলেটে। আয়ারল্যান্ডের তরুণ ব্যাটসম্যান হ্যারি টেক্টর ও অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার বেন কাটিংকেও পাচ্ছে গতবারের রানার্সআপরা।
বিদেশি তারকা ক্রিকেটার নেই কেবল নতুন দল দুরন্ত ঢাকার। শ্রীলঙ্কার সাদিরা সামারাবিক্রমা ও পাকিস্তানের উসমান কাদির খেলবেন এই দলে। পাকিস্তানের সায়েম আইয়ুবও আছেন। তবে স্থানীয়দের মধ্যে তারকা বলতে তাসকিন আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন ও মোহাম্মদ নাঈম।