বিপিএল কাপ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

প্রকাশিত: ৪:০৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪

ক্রীড়া ডেস্ক :

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) তৃতীয় আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আর্বিভাব। আসলো, দেখলো, জয় করলো— প্রচলিত প্রবাদের মতো প্রথম অংশগ্রহণেই মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার নেতৃত্বে বিপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

পাকিস্তান বংশোদ্ভূত অখ্যাত ইংলিশ ক্রিকেটার আশার জাইদি কুমিল্লায় খেলে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন ওই আসরে। তারপর আরও তিনবার, সর্বমোট চারবার দেশসেরার ট্রফি জিতেছে দলটি। সন্দেহাতীতভাবে বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা। বিপিএলের অলঙ্কার হয়ে উঠেছিল বললেও অত্যুক্তি হবে না।

টুর্নামেন্ট কেন্দ্রিক বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এমন প্রশংসা দলটার প্রাপ্য মনে হয়। আলোচনা-সমালোচনা, নাটুকে কাহিনী, সাফল্য-ব্যর্থতা, মান-অভিমানের গল্প সবকিছুই ছিল কুমিল্লার অধ্যায়ে। প্রতি আসরেই বিপিএলের হাই প্রোফাইল, শক্তিশালী দল গড়া, চমক দেখানো তথা শিরোপা জিততে সবসময় মরিয়া ছিল তারা। অন্দরমহলের বেদবাক্য ছিল একটাই—ট্রফি জয়।
বিদেশি তারকা ক্রিকেটার আনা, ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে প্রতিটি আসর নিয়ে পরিকল্পনা করা, বিগ বাজেট নিয়ে খেলোয়াড় কেনায় নামাটা তাদের সহজাত ও পেশাদার কর্মকাণ্ড ছিল। বিপিএলের ট্রফির জন্য একটা দুর্দমনীয়, প্রেরণাদায়ী লোভ দেখা যেত দলটার মাঝে (পাগলাটেও বলতে পারেন)। তারকা ক্রিকেটারে ঠাসা ভারসাম্যপূর্ণ দল গড়া, দর্শককুলকে বিনোদিত করায় সফল ছিল তাদের ম্যানেজমেন্ট। দেশে-বিদেশে দলটার ফ্যানবেইজও অনেক বড় ছিল।

আলোচনা-সমালোচনা, নাটুকে কাহিনী, সাফল্য-ব্যর্থতা, মান-অভিমানের গল্প সবকিছুই ছিল কুমিল্লার অধ্যায়ে। প্রতি আসরেই বিপিএলের হাই প্রোফাইল, শক্তিশালী দল গড়া, চমক দেখানো তথা শিরোপা জিততে সবসময় মরিয়া ছিল তারা। অন্দরমহলের বেদবাক্য ছিল একটাই—ট্রফি জয়

বিশ্ব ক্রিকেটের সমসাময়িক সেরা ক্রিকেটাররা কুমিল্লা শিবিরে খেলে গেছে। অস্বীকার করা যাবে না, এগুলো আদতে বিপিএলের তারকা খ্যাতি, গুণগত মানও বাড়িয়েছিল। কেউ কেউ আবার সেরা ফর্মে থাকাকালীন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে বিশ্বজুড়ে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তার মাঝেই কুমিল্লায় খেলেছেন। একটু যদি স্মৃতি হাতড়ে খুঁজি, স্টিভ স্মিথ, জস বাটলার, রশিদ খান, মঈন আলী, শহীদ আফ্রিদি, রিজওয়ানদের নাম দেখা যায়।

আর আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিনদের তো কুমিল্লার ঘরের ছেলেই বলা যায়। ছিল আরও কত কত ঈর্ষনীয় পারফর্মার। মাশরাফি, অলক কাপালি, তামিম, লিটন, মুস্তাফিজ, ইমরুল, সাইফউদ্দিন, আবু হায়দার রনি, মেহেদী হাসান, হাল সময়ে জাতীয় দলের নির্ভরতা জাকের আলী অনিকের মতো অনেক দেশী তারকা ক্রিকেটার খেলেছেন কুমিল্লার হয়ে এবং সফল হয়েছেন।

নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেওয়া, তাদের গড়ে তোলার কাজটাও দলটা করেছে। বিপিএলের একমাত্র (সম্ভবত) দল হিসেবে কুমিল্লায় নিজস্ব ক্রিকেট একাডেমি আছে তাদের। যার অর্থায়নও তারাই করে (এখনো কার্যক্রম চলমান)। যা ফ্র্যাঞ্চাইজ মডেলের টুর্নামেন্টে দলগুলোর জন্য অপরিহার্য কাঠামো।

কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বিপিএলে দলটার সাফল্যের নেপথ্য নায়ক, প্রাণভোমরা। কার্যত কুমিল্লার সমার্থক হয়ে গেছেন বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ। এবং দেশের অন্যতম সফল কোচ সালাউদ্দিনের অভিজ্ঞতার ঝুলিও সমৃদ্ধ হয়েছে কুমিল্লার শিরোপা মিশন সামলে। যদিও এবারের টুর্নামেন্টে নিখাদ দর্শক উনি। কোনো দলের সাথে সম্পৃক্ত নন বলে বিপিএল চলাকালীন হৃদকম্পন, ট্রফি জয়ের চাপকে ছুটি দিতে পেরেছেন। সর্বোচ্চ চারবার ট্রফিজয়ী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আজ শুরু হতে চলা বিপিএলের ১১তম আসরে নেই। এমন পেশাদার একটা দল না থাকাটা টুর্নামেন্টের জন্য, দর্শকদের জন্য হতাশার। বিপিএল মানেই ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফদের পারিশ্রমিক নিয়ে বিতর্ক, টালবাহানার মচ্ছব। সেদিক থেকে কুমিল্লার ভূমিকা ছিল পুরোপুরি পেশাদার। পারিশ্রমিক, সুযোগ-সুবিধায় অন্য দলগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল বলেই ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফরাও নিশ্চিতভাবে মিস করবেন দলটাকে

 

বিপিএলের একমাত্র (সম্ভবত) দল হিসেবে কুমিল্লায় নিজস্ব ক্রিকেট একাডেমি আছে তাদের। যার অর্থায়নও তারাই করে (এখনো কার্যক্রম চলমান)। যা ফ্র্যাঞ্চাইজ মডেলের টুর্নামেন্টে দলগুলোর জন্য অপরিহার্য কাঠামো।
বাস্তবতা হলো এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স নেই, তবে সময়ের দাবি মিটিয়ে বিপিএল থেমে থাকবে না। মাঠের ক্রিকেট, বিতর্ক, অব্যবস্থাপনার মূর্তি অক্ষত রেখে (!) এগিয়ে যাবে বিপিএল। সবকিছুর পরেও দর্শক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই, অলক্ষ্যে টুর্নামেন্টটাও হয়তো খুঁজে ফিরবে অদম্য কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে!