ক্রীড়া ডেস্ক:
গলি ক্রিকেটার থেকে ফয়সালাবাদ দলে। বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিং বেশি ভালো পারতেন। পুরো জেলাজুড়ে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল রানা ফাহিম স্টোকস। সেই পরিচিতি একদিন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। পাকিস্তান দলের হয়ে খেলার সুযোগ মেলে। গত বছর নভেম্বরেও পাকিস্তান দলের খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি হলেন ফরচুন বরিশালের পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ। পাকিস্তানের হয়ে খেলা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়, বিপিএলে খেলার গল্পের ঝুলি খুলে বসেছিলেন ফাহিম আশরাফ। শ্রোতা সেকান্দার আলী।
বাংলাদেশে খেলতে এসে এবার কেমন লাগছে?
ফাহিম: খুবই ভালো লাগছে। এ দেশের মানুষ অসাধারণ। খুবই আন্তরিক এবং অতিথি পরায়ন। যেখানেই যাই, সবাই সালাম দিয়ে কুশল জানতে চায়। এবার অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার বিপিএলে খেলছে। সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে মাঠে, হোটেলে। আমাদের মিলনমেলা মনে হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, অনেকের সঙ্গে পাকিস্তানেও লম্বা সময় দেখা হয় না।
বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। বিপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের উন্নতি কেমন দেখছেন?
ফাহিম: বাংলাদেশ এখন ভালো ক্রিকেট খেলে। অনূর্ধ্ব-১৯, জাতীয় দল; সব জায়গায় ভালো খেলছে। ১৯ দল টানা দুবার এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন। ফরচুন বরিশালে পেসার ইকবাল হোসেন ইমন চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়। বিপিএলে অভিষেকে ইমন ভালো বোলিং করেছে। আমি ২০১৯ সালে প্রথম খেলতে এসে শান্তকে (নাজমুল) দেখেছি। মাশাআল্লাহ আজ সে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। হাসানকে (মাহমুদ) দেখেছিলাম, এখন সে বাংলাদেশ দলের মূল বোলার। গত বছর খুলনায় খেলেছি, তখন নাহিদকে (রানা) দেখেছি। এখন সে দারুণ একজন বোলার। পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট ম্যাচে ভালো খেলেছে। এ বছর বিপিএলে হাইরেটেড বোলার নাহিদ। বিপিএল ভালোভাবে চালালে বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠে যাবে।
রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয় দেখেছেন?
ফাহিম: বাংলাদেশকে পাকিস্তান সহজভাবে নিয়েছিল। ভেবেছিল, নিজেদের কন্ডিশনে জিতে যাবে। পাকিস্তান দলের ম্যানেজমেন্ট কল্পনাই করতে পারেনি বাংলাদেশ টেস্টে অনেক দূর চলে গেছে। যেটা বললাম– প্রতিবছর বিপিএল থেকে নতুন নতুন খেলোয়াড় যোগ হচ্ছে জাতীয় দলে। পেস বোলিং বিভাগ দারুণ উন্নতি করেছে। কন্ডিশনের সুবিধা নিতে তারা যে পিচ বানিয়েছিল, সেখান থেকে উল্টো বাংলাদেশ সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বোলিং, ব্যাটিং ভালো ছিল। কোনো দেশের বিপক্ষে তাদের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ খেলা খুবই কঠিন। জিম্বাবুয়েকে জিম্বাবুয়ের কন্ডিশনে হারানো চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ পাকিস্তানে গিয়ে টেস্ট ম্যাচে হারিয়েছে- সোজা কথা না। টি২০ ম্যাচ হলে বুঝতাম হতেই পারে। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করা সহজ ছিল না। খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে পাকিস্তান ক্রিকেট দল ও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের অনেক সমর্থক। এই জিনিসটা কেমন লাগে?
ফাহিম: বাংলাদেশ-পাকিস্তান-ভারত একই ছিল। পরে আমরা আলাদা হয়েছি। বাংলাদেশ যেখানেই খেলুক, পাকিস্তানের সমর্থন থাকে। কারণ মুসলমান দেশ খেলছে। মনের অজান্তেই ধর্মীয় বিষয়টি সমর্থনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। আমরা যখন বাংলাদেশে খেলি, এ দেশের মানুষের সমর্থন এবং ভালোবাসা পাই মুসলমান হওয়ার কারণে। বিপিএলে খেলার সময় যে সমর্থন পাই, তাতে মনে হয় পাকিস্তানেই খেলছি। আমরা আরেক দেশের নাগরিক হলেও মুসলিম হিসেবে এখানে সম্মানিত।
বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার কোনো স্মৃতি?
ফাহিম: ২০২১ সালে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ার পর আমরা বাংলাদেশে টেস্ট খেলতে এসেছিলাম। খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে কিছুটা ডাউন ছিল। টি২০ সিরিজে ভালো করেছি। টেস্ট সিরিজটি কঠিন ছিল। বাংলাদেশের কন্ডিশনে টেস্ট ম্যাচ জিতে খুব আনন্দ পেয়েছি। ওটাই বাংলাদেশে বিপক্ষে আমার সেরা স্মৃতি।
আপনার ক্যারিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট কোনটা?
ফাহিম: আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলা ৬৪ রানের একটি ইনিংস। ২০১৭ সালে আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দলে ছিলাম, কিন্তু খেলা হয়নি। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি ম্যাচে সুযোগ মেলে খেলার। ৬৪ রান করেছিলাম বাংলাদেশের বিপক্ষে। এর পর থেকে নিয়মিত খেলি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ নিই মাঠে খেলে।
ক্রিকেট আপনাকে কী দিয়েছে?
ফাহিম: আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে– বিশ্বের কাছে পরিচিতি, খ্যাতি, সম্মান, অর্থ। আমি ফাহিম আশরাফ হয়েছি ক্রিকেটের কারণে। আমার পরিবার সচ্ছল হয়েছে ক্রিকেটের কারণে।
স্মরণীয় স্মৃতি?
ফাহিম: অনেক আছে। তবে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের স্মৃতি ভোলার নয়। ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়কে এক নম্বরে রাখব। আমরা ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলাম। শেষ ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হই।
পাকিস্তান সম্প্রতি ব্যাটার খুঁজতে ট্যালেন্ট হান্ট কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। চার-ছক্কা মারতে পারে এমন ব্যাটার খুঁজছে। এ ধরনের উদ্যোগ কেন?
ফাহিম: পাকিস্তান দলে খেলার আগে অনেক লোকাল ক্রিকেট খেলেছি। ওখানে প্রচুর টেপ বল ক্রিকেট হয়। সবাই ডিফেন্সের চেয়ে মারতে বেশি পছন্দ করে। মারতে পারে এমন বাচ্চা অনেক পাবেন। তাদের ছোট ছোট জিনিস ঠিক করতে হবে। সেগুলো করতে পারলে ভালো ক্রিকেটার পাবে। দেখবেন, পাকিস্তান থেকে যত ব্যাটার আসে, লোয়ার অর্ডার বা মিডল অর্ডার সবাই হিট করে। ট্যালেন্ট হান্ট থেকেও প্রচুর ব্যাটার পাওয়া যাবে। তাদের ঠিকভাবে গাইড করা গেলে ক্রিকেট লাভবান হবে।