বিপ্লব যখন সফল হয়, তখন পুরোনো সংবিধান অকার্যকর

প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২৪

সাজ্জাদ হোসেন:

ছাত্রসমাজের আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এর পরে রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন সৈয়দ রেফাত আহমেদ। পুরো প্রক্রিয়াটি কতটা সংবিধানসম্মত হয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন।

কোনো বিপ্লব যখন সফল হয়, তখন পুরোনো সংবিধান আর কার্যকর থাকে না। তখন গণদাবিটাই হলো আইন। এদিক থেকে বাংলাদেশে শনিবার যা হয়েছে, তা খুবই ঠিক কাজ হয়েছে। কারণ, এটাই জনগণ দাবি করেছে এবং পরিবর্তনটা তারা গ্রহণ করেছে।
এ বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যা হলো, প্রত্যেক নাগরিকেরই জন্মগত এবং সহজাত কিছু অবিচ্ছেদ্য অধিকার রয়েছে। এসব অধিকারের মধ্যে রয়েছে জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, নির্বাচিত সরকার পাওয়ার অধিকার। যখন কোনো রাজা বা শাসক সেই অধিকারগুলো ধ্বংস করে, তখন সেই শাসন ব্যবস্থা বদলানোর দায়িত্ব জনগণের ওপর বর্তায়। জনগণ তখন সেই শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন অথবা বিলোপের অধিকার রাখে। আইনের ব্যাখ্যায় এমনও বলা হচ্ছে, জনগণ যদি স্বৈরশাসককে মেনে নেয় বা বদলাতে ব্যর্থ হয়, তখন দৈব প্রতিশোধ (উবারহব ঠবহমবধহপব) নেমে আসে। তা যাতে না নেমে আসে, তার জন্য তখন মানুষ রাস্তায় নামে। বাংলাদেশের মানুষ সেটাই করেছে। তারা যেহেতু এই বিপ্লবে সফল হয়েছে, সেহেতু বিদ্যমান সংবিধান আর বহাল থাকছে না। কিন্তু এই বিজয়ী শক্তি যদি বলে, তারা বিদ্যমান সংবিধানের আংশিক বা অর্ধেক বা বাছাইকৃত অংশ মেনে নিচ্ছে, তখন সেটাই আইন। কারণ, জনগণই আইনের উৎস। এ বেছে নেওয়ার অধিকারের বলেই অন্তর্র্বতীকালীন সরকার আইনিভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই বর্তমানে যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটাও জনগণের বিপ্লবী পরিষদেরই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হয়েছে। এ সরকার জনগণের ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তারা জনগণের ইচ্ছার বাস্তবায়ন ঘটানোয় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

বিপ্লবী জনগণের এ সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হবে পরের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে। সেই সংসদ জনগণের নেওয়া পদক্ষেপের যতটা প্রয়োজন, ততটা বা তার বাছাই করা অংশ গ্রহণ করবে। সেই সংসদ যদি মনে করে এটা বাস্তবসম্মত না, তারা তখন তা বাদও দিতে পারবে।
সংবিধানের দুটি অংশ– একটি লিখিত, অন্যটি অলিখিত। অলিখিত সংবিধান হলো সেটাই, যা নাকি জনগণের মৌলিক অধিকার। পৃথিবীতে হাম্মুরাবির আইন থেকে এ যাবত যত আইন বা লিগাল ডিক্টাম এসেছে, যেমন ন্যাচারাল ল, ডিভাইন ল—সেসব থেকেই জনগণ তার অধিকার আদায়ের আইনী যুক্তি গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ হলো সংবিধানের ধ্রবতারা। এখানে বলা হয়েছে, জনগণই দেশের মালিক। জনগণ কীভাবে মালিক তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যার কথাই ওপরে আমি বলেছি।