বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, আতঙ্কে নদী পাড়ের মানুষ

প্রকাশিত: ১২:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার অনেক নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। বসতবাড়ির পাশাপাশি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে।
এদিকে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোও ঝুঁকিতে পড়েছে। বন্যা ও ভাঙ্গন আতংকে দিন পার করছে নদী পাড়ের হাজারও মানুষ। জেলার ৫টি উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৭ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে শনিবার দুপুর থেকে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হয়। ফলে নদী তীরবর্তী অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। সেই সাথে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবরধন হায়দারীয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রটি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সেখানে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
রবিবার সকালে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, সলেডি স্পার-২, চন্ডিমারী, গোবরধন, বাহাদুরপাড়া, আরাজি ছালাপাকসহ কয়েকটি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। আবার অনেকেই গবাদিপশু ও পরিবারের লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারে শুকনা খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

বাহাদুর পাড়া গ্রামের পানিবন্দী আফজাল হোসেন মোবাইল ফোনে জানান, সারারাত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘরের ভিতরে পানি প্রবেশ করায় রাত থেকে চুলা জ্বালা বন্ধ রয়েছে। পানি না কমলে খাবার কোন উপায় থাকবে না। তিনি পরিবার নিয়ে খুব বিপদে আছেন বলেও জানান। আফজালের মত পানিবন্দী পরিবারগুলোর একই অবস্থা।

এদিকে নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোরে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকলে এসব ফসলের মারাত্মক ক্ষতির শঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরে মাছ। মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সলেডি স্প্যার বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বাঁধ ভেসে যাওয়ায় শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ভাটিতে থাকা শত শত পরিবার।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, রোববার সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার সাংবাদিকদের জানান, কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খুব দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে যাতে বাঁধ বা সড়ক ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত না হয়। সেটা নজরদারি করে ইতোমধ্যে জিও ব্যাগ দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলা করতে জেলা, উপজেলা প্রশাসন আমরা প্রস্তুত রয়েছি।