বিয়েতে দাওয়াত পেলেন না ভাই, ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫

শরীয়তপুর প্রতিনিধি:

 

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় বিয়ের দাওয়াতকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কাজিকান্দি এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত সামসুল হক সরদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিনোদপুর এলাকায় দুটি পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। শুনেছি, দুই পক্ষের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু এটি পারিবারিক ঘটনা, তাই দু’পক্ষই থানায় এসেছেন। এখনও কোনো মামলা হয়নি, তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’

পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৮ ফেব্রুয়ারি ইমামুল হক সরদারের মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি তাঁর ভাই আজিজুল সরদারের পরিবারকে দাওয়াত দেননি। প্রতিশোধ হিসেবে আজিজুল সরদারও তার ছেলের বিয়েতে ইমামুলের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানাননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইমামুল সরদারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র, রামদা, বাঁশ ও লাঠি নিয়ে আজিজুল সরদারের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, বাকিরা বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গুরুতর আহত সামসুল হক সরদারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি আহতরা হলেন- আব্দুর রহমান কাজী (৫০), ইউপি সদস্য, ৫ নম্বর ওয়ার্ড, বিনোদপুর ইউনিয়ন, মনোয়ার কাজী (৩২), সাবেক ইউপি সদস্য, বোরহান কাজী (৫০) আজিজুল সরদার (৫০)।

আজিজুল সরদারের পক্ষের আহত ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান কাজী বলেন, ‘এনামুল তাঁর মেয়ের বিয়েতে আমাদের দাওয়াত দেয়নি। কিন্তু আমরা তাদের দাওয়াত দিতে চেয়েছিলাম। তবুও তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

তিনি বলেন, ‘এনামুল সরদার ও খলিল মাদবরের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন লোক আমাদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের কয়েকজন কুপিয়ে-পিটিয়ে আহত করে।’

অন্যদিকে, এনামুল সরদারের বড় ভাই গুরুতর আহত সামসুল হক সরদার বলেন, ‘ওরা দু’জনই আমার ভাই। আমি কেন হামলা চালাব? আমি বিনোদপুরে ইউপি নির্বাচন করব, তাই এলাকায় গিয়েছিলাম। শুনতে পেলাম, আমার দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। তখন আমি থামাতে গেলে আমার ওপর হামলা হয়। আমার মাথা ও হাতে আঘাত লেগেছে। আমার পক্ষ থেকে কোনো হামলা চালানো হয়নি।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালে ৪ জন ভর্তি আছেন, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। গুরুতর আহত সামসুল হক সরদারকে রাত ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। মাথা, পিঠ, পা ও হাতে বেশি আঘাত পেয়েছেন। সবারই রক্তক্ষরণ হয়েছে। মূলত ধারালো অস্ত্র, ভোতা অস্ত্র ও লাঠির আঘাতে আহতদের শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনামুল ও আজিজুলের মধ্যে জমি সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিরোধও রয়েছে, যা এই সংঘর্ষের একটি বড় কারণ হতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।