বিয়ের আয়োজনের মধ্যেই লাশ হলেন দুই ভাই

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪

হাবিবা ইসলাম (রাজবাড়ী) 

বিয়ের আয়োজন চলছে। বাড়িভর্তি আত্মীয়-স্বজন। বিয়ের গেট, প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা করা হয়েছে। দুই ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে গাজীপুর থেকে ফিরছিলেন বড় ভাই মনিরুল ইসলাম মমিন। বুধবার রাত ১১টার দিকে ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সুমন তাকে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে আনতে যান মোটরসাইকেলে। কিন্তু ফেরার পথে রাত সোয়া ১২টার দিকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলার মকবুলের দোকান এলাকায় ইটভাটার মাটি বহন করা ড্রামট্রাকের চাপায় বড় ভাই মমিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। ছোট ভাই সুমনকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানীয়রা নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বৃহস্পতিবার মেজ ভাই শামীম আর শুক্রবার ছোট ভাই সুমনের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। দুজনের বৌভাত শনিবার একসঙ্গে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ আয়োজনের মধ্যেই একটি সড়ক দুর্ঘটনা সব শেষ করে দিলো।নিহত দুজনের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে। তারা তিন ভাই ও এক বোন ছিলেন।

মানিকগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কর্মরত ওই পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান শামীউল ইসলাম শামীম বলেন, ‘রাজবাড়ীর ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি এলাকায় পারিবারিকভাবে এক বছর আগে তার বিয়ে ঠিক হয়। বৃহস্পতিবার বিয়ে করতে যাওয়ার কথা। এদিকে, রাজবাড়ী আলীপুর এলাকায় বিয়ে ঠিক হয় ছোট ভাই সুমনের। শুক্রবার তার বিয়ে হওয়ার কথা। সুমন রাজবাড়ী যুব উন্নয়ন অধিদফতরে কর্মরত। শনিবার দুই ভাইয়ের বৌভাত অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। বুধবার রাতে দুজনের একসঙ্গে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল।’

তিনি বলেন, ‘বিয়ের আয়োজনে অংশ নিতে বুধবার গাজীপুরের পোশাক কারখানায় কর্মরত বড় ভাই মমিন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। রাত ১১টার দিকে তিনি পাটুরিয়া পৌঁছালে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে তাকে আনতে দৌলতদিয়া ঘাটে যায় ছোট ভাই সুমন। ফেরার সময় পথে গোয়ালন্দের নবুওছিমুদ্দিন পাড়া এলাকায় মহাসড়ক থেকে সংযোগ সড়কে নামার সময় মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। সেখানেই আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো! বাড়িভর্তি আত্মীয়-স্বজন দাওয়াতে এসেছেন। দুই ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনও এসেছেন। বিয়ের সব অনুষ্ঠান শোকে পরিণত হয়ে গেলো।’

প্রতিবেশী রাচ্চু শেখ বলেন, ‘দুই ভাইয়ের একসঙ্গে বিয়ে বলে আমরা সবাই আনন্দ করছিলাম। আত্মীয়-স্বজন অনেকে এসেছেন। ওরা তিন ভাই অনেক ভালো। একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যু আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আজ যাদের বিয়ের সাজে সাজার কথা, সেখানে তাদের চিরতরে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এলাকায় শোকের ছাড়া নেমে এসেছে।’

খানখানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এ দুর্ঘটনার বিষয়টি খুবই হৃদয়বিদারক। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

গোয়ালন্দ মোড় আহলাদীপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক এম আল মামুদ বলেন, ‘খবর পেয়ে বুধবার রাতেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেল এবং ঘাতক মাটি বহনকারী ড্রামট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।’