বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তিসহ যেসব কারণে চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত

প্রকাশিত: ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক :

এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে আইসিসির দুটি শিরোপা জিতল ভারত। সেটিও আবার টানা অপরাজিত থেকে। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সদ্য সমাপ্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও অপ্রতিরোধ্য ভারতেরই দেখা মিলল। এর আগে আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে জয়ের নজির ছিল না ভারতের। এবার সেই গেটলকও ভাঙল ম্যান ইন ব্লুরা।

২০০০ সালে এই ভারতকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। এরপর ২০২১ সালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালেও কিউইদের কাছে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল রোহিতদের। এবার পাশার দান পাল্টে গেল। প্রতিশোধ নিলো ভারত। নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপা পুনরুদ্ধার করল তারা। টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ তিনবারের চ্যাম্পিয়নও এখন টিম ইন্ডিয়া।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক পাকিস্তান হলেও ভারত দেশটিতে খেলতে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যু দুবাইয়ে আয়োজন করা হয়। এবারের আসরে ভারত নিজেদের সব ম্যাচ এক ভেন্যুতেই খেলেছে। অথচ ফাইনালে খেলা নিউজিল্যান্ডকে চার ভেন্যু ও দুই দেশে ঘুরেফিরে খেলতে হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং আয়োজক পাকিস্তানকেও দুই দেশ ঘুরে খেলতে হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দল এক জায়গাতেই ছিল।

রোহিত শর্মাদের শুধু হোটেল থেকে মাঠে যেতে হয়েছে এবং মাঠ থেকে হোটেলে ফিরতে হয়েছে। যাতায়াতের ধকল থেকে বেঁচে গিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে একই মাঠে সব ম্যাচ হওয়ায়, পরিকল্পনা করাও সহজ হয়েছে রোহিতদের জন্য। পরিস্থিতি অনুযায়ী দল বেছে নিতে পেরেছেন। যা বাকি দলগুলোর থেকে এগিয়ে দিয়েছে ভারতকে। যদিও গম্ভীর, রোহিতরা মানতে চাননি একই মাঠে খেলায় তারা বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে অনেকেই অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ অবশ্যই একই মাঠে খেলার বিশেষ সুবিধা।

একই মাঠে খেলার সুবিধা ছাড়াও ভারতকে এগিয়ে দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যেহেতু সব ম্যাচ তারা দুবাইয়ে খেলবে, উইকেটের খোঁজখবর আগেই নিয়ে রেখেছিল ভারত। কন্ডিশন ও উইকেট বিবেচনায় নিয়েই ইনফর্ম ব্যাটার যশস্বী জয়সওয়ালের জায়গায় বাড়তি একজন স্পিনার নিয়েছিল। শেষ মুহূতে বরুণ চক্রবর্তীর অন্তর্ভুক্তি ভারতকে কিভাবে পাল্টে দিয়েছে সেটিতো ফলাফলই বলে দিচ্ছে। ভারত গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ থেকে চার জন স্পিনার নিয়ে খেলতে নামছিল। রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল এবং কুলদীপ যাদব ছিলেন। সেই সঙ্গে একাদশে নেওয়া হয় বরুণ চক্রবর্তীকে। এ চার জন মিলে গোটা আসরে ২৬টি উইকেট তুলে নিলেন। এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলে বরুণ নেন ৯ উইকেট। ভারতের চার স্পিনারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট দখলে নিয়েছেন তিনিই। শুধু উইকেট নেওয়াই নয়, মিডল ওভারে যে ভাবে রান আটকে রেখেছিলেন, সেটাও ভারতীয় দলকে আরও শক্তিশালী করেছে।

আসর শুরুর আগে চোটের কাছে হার মেনে ছিটকে গিয়েছিলেন তর্কসাপেক্ষে বর্তমান সময়ের সেরা পেসার জসপ্রীত বুমরাহ। তার অনুপস্থিতি খুব একটা বুঝতে দেননি অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ শামি। দীর্ঘ বিরতির পর দলে ফিরেই বড় আরেকটা টুর্নামেন্ট খেলতে নেমে নিজের সামর্থ্য দেখালেন। স্পিনারদের দাপটের মাঝেই দুবাইয়ে ৯ উইকেট তুলে নিয়েছেন শামি। নিজের কাজটা করে গিয়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। পরের ম্যাচগুলোতেও নতুন বলে চাপ তৈরি করেছেন বার বার। ফাইনালে যদিও ডেথ ওভারে রান দিয়ে ফেলেন, তবুও শামি না থাকলে ভারতের পেস আক্রমণ নেতৃত্বহীন হয়ে যেত এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের আরেকটা বড় কারণ ভারতের ব্যাটিং গভীরতা। দলটির ব্যাটিং অর্ডার এত বড় যে রবীন্দ্র জাদেজার মতো অলরাউন্ডারকেও আট নম্বর পজিশনে খেলতে হয়। যশস্বী জয়সওয়ালের মতো ইনফর্ম ব্যাটারকে বাদ দিয়েই স্কোয়াড সাজানো হয়। গোটা আসরজুড়ে বসে কাটিয়েছেন ঋষভ পান্ত। এ ছাড়া গিল ও কোহলিদের দুর্দান্ত ফর্মতো আছেই।

এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৫ ম্যাচে ২১৮ রান করেন বিরাট কোহলি। ফাইনালে মাত্র ১ রান করে আউট হলেও, গোটা প্রতিযোগিতায় ফর্মে ছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার শতরানে ভর করেই ম্যাচ জিতেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে করেছিলেন ৮৪ রান। সেই ম্যাচেও সেরা হয়েছিলেন কোহলি। ভারতকে দু’টি বড় ম্যাচ জিতিয়েছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ ব্যাটার য ভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রান করে দলকে ভরসা দিলেন, তাতে গোটা দলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। কোহলি চাপটা কাটিয়ে দিতেই শ্রেয়াস আয়ার, লোকেশ রাহুলরা নিশ্চিন্তে রান করে ম্যাচ জেতান ভারতকে