নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিসিএস পরীক্ষার আবেদনে বয়সসীমা উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক মেজর (অব.) অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি যদি ৪০ বছর বয়সেও বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাহলে তাকে সেই সুযোগ না দেওয়া এক ধরনের বৈষম্য। শেখ হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশে আমরা আর কোনো ধরনের বৈষম্য দেখতে চাই না। আমরা চাই না চিকিৎসকরা এ ধরনের দাবি নিয়ে বার বার সেবা ছেড়ে আন্দোলনে নামুক।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. মিনার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে দেশের সীমাহীন বৈষম্য ছিল। এসব বৈষম্য থেকে মুক্তি পেতেই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আমরা চাই নতুন বাংলাদেশে কোনো ধরনের বৈষম্য না থাকুক।
তিনি বলেন, সরকারকে বলবো আপনারা বিসিএসের বয়সসীমা ওপেন (উন্মুক্ত) করে দিন। একজন ব্যক্তি যেন ৪০ বছর বয়সেও এসে বিসিএস দিতে পারে। সে ব্যক্তি যদি ওই বয়সে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে পারে তাহলে আপনার-আমার অসুবিধা কোথায়? তাকে তো অবশ্যই কাজের সুযোগ দিতে হবে। চাকরিতে উন্মুক্ত বয়সসীমা পৃথিবীর বহু দেশেই আছে।
চিকিৎসকদের প্রসঙ্গে ডা. আব্দুল ওহাব বলেন, অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৪ বছরের অনার্স করেই বিসিএস দিতে পারে, কিন্তু চিকিৎসকদের এমবিবিএস পাস করতেই ৬ বছর লেগে যায়। সে বিবেচনাতেই পূর্বে চিকিৎসকদের জন্য বিসিএসে ২ বছর বাড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু এবার অন্যান্য সকলের বয়সসীমা ২ বছর বাড়ালেও চিকিৎসকদের আগেরটাই রয়ে গেছে। এটা তো তাদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্য। সরকারকে আহ্বান জানাবো দ্রুতই যেন তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনে চিকিৎসকদের উপস্থিতি কম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর আগে শাহবাগে ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলনে আমরা অসংখ্য চিকিৎসককে দেখেছি। সেখানে যারা ছিল তাদেরকে আমরা বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনে দেখছি না। এটা আমাকে খুবই মর্মাহত করেছে। চিকিৎসক জাতি আসলে খুবই সেলসিস। এরকম হলে তো হবে না। চিকিৎসকদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সরকারি উপদেষ্টা-আমলাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন যারা সচিবালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসে আছেন এবং যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, আপনারা তো আসলে বসন্তের কোকিল। ডক্টর ইউনুস যেহেতু একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, তাই ছাত্ররা তাকে এনে প্রধান উপদেষ্টার পদে বসিয়েছে। কিন্তু বাকি যারা বিভিন্ন পদ পদবীতে বসে আছেন, এসব পদে বসার জন্য আপনারা কি যোগ্যতা রাখেন? আপনার দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্যই বা কি করেছেন? আপনারা কি কখনো বস্তিতে বসবাসরত একজন সাধারণ মানুষের জীবন যাপন দেখেছেন? অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আছেন যাদের আসলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই। আর এখন দেশ চালাচ্ছেন।
এবি পার্টির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কি কখনো বস্তিতে গিয়েছেন? স্বাস্থ্যের ডিজি কি কখনো গিয়েছেন? তাহলে তারা বস্তিবাসীর রোগ সম্পর্কে কীভাবে জানবেন, আর কীভাবে এবার তাদের সেবা দেবেন? কেন ওসব এলাকায় হাসপাতাল হবে না? কেন প্রবাসীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল হবে না, যাদের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স আসছে? সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্যই আমাদের এই চেয়ারগুলোতে বসানো হয়েছে, ওদেরকে কাজের মাধ্যমেই সেটি প্রমাণ করতে হবে।
অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরও বলেন, শেখ মুজিবের মেয়ের তো দেশ ছেড়ে পালানোর কথা না। অপকর্মের কারণেই পালাতে হয়েছে। ভবিষ্যতে যদি কেউ এসব অপকর্ম করে, তাহলে তাদেরকেও কিন্তু পালাতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি ও ইউমবের মুখপাত্র ডা. মোবারক হোসেন। এসময় চিকিৎসকদের মধ্য থেকে আরও বক্তব্য রাখেন চিকিৎসক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী, ডা. রাইয়ান আক্তার, ডা. সারওয়ার জাহান তুহিনসহ আরও অনেকে।