বিসিসিআইয়ের আজীবন সম্মাননা পেলেন শচীন প্রলোভন দূরে রেখে তরুণদের ক্রিকেট সাধনার পরামর্শ শচীনের
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ক্রীড়া ডেস্ক :
কেউ তাকে বলেন ‘ক্রিকেটের বরপুত্র’ আবার কারও চোখে তিনি খোদ ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’। এই ঈশ্বর শব্দটায় অনেকের আপত্তি থাকতে পারে, তবে আদতে তিনি তাই। ভারতে ক্রিকেট ধর্ম হলে, ঈশ্বর তো শচীনই হবেন। তার খেলা মানেই স্টেডিয়ামে জনসমুদ্র। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ম্যাথু হেইডেন একবার বলেছিলেন, ‘আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। তিনি ভারতের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করেন।’
ভারতীয় ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য শচীন টেন্ডুলকারকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করেছে। গতকাল (শনিবার) সেই সম্মাননা নিতে গিয়ে তরুণ ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিয়েছেন শচীন। প্রলোভন দূরে রেখে একমনে ক্রিকেট সাধনার কথা বলেছেন তিনি।
শনিবার বিসিসিআইয়ের অনুষ্ঠানে শচীনকে ভারতীয় ক্রিকেটে অবদানের জন্য ‘কর্নেল সিকে নাইডু’ আজীবন সম্মাননা তুলে দেন বোর্ডের সাবেক সচিব ও বর্তমানে আইসিসির চেয়ারম্যান জয় শাহ। সেই অনুষ্ঠানেই শচীন জানিয়েছেন, তার জীবনে মূল্যবোধের কতটা গুরুত্ব। তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে দু’বছর আমার ব্যাটের কোনো স্পন্সর ছিল না। তারপরও মদ বা তামাকের বিজ্ঞাপন করিনি। কারণ, আমার জীবনে মূল্যবোধের বড় ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের শিক্ষা সবসময় আমাকে সামনে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’ উঠতি ক্রিকেটারদেরও সেই মূল্যবোধ মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন শচীন।
১৯৮৯ সালে ভারতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ক্রিকেটই তাকে পথ দেখিয়েছে। ব্যাট হয়েছে তার হাতিয়ার। সেই ব্যাটকে তাই অনেক যতেœ রাখেন তিনি। এখনও ব্যাটকে প্রণাম করেন। ক্যারিয়ারে কোনো কিছুই হালকাভাবে নেননি শচীন। সব কিছুকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সবার আগে রেখেছেন ক্রিকেটকে। সেই কথা শোনা গিয়েছে তার গলায়। শচীন বলেন, ‘ক্রিকেট না থাকলে এই ঘরে আমরা বসে থাকতাম না। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার। আমাদের কাছে ব্যাট-বল আছে। শক্ত করে তাকে ধরে থাকতে হবে। মুঠো আলগা করলে চলবে না। যদি মুঠো আলগা হয় তাহলে ক্যারিয়ারও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে।
সেই কারণেই নিজের মনঃসংযোগ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন শচীন। কোনও প্রলোভনে পা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু বলব, মনঃসংযোগ ধরে রেখে এক লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। ক্যারিয়ারে অনেক প্রলোভন আসবে। তাতে পা দিলে হবে না। সবার আগে দেশ। তার জন্য খেলতে হবে। এখানে যারা আছে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বেঁচে আছে। সেটা কাজে লাগাতে হবে। কারণ, অবসরের পরে বুঝবে খেলার মাঠটা কত আনন্দের ছিল।’
২০১৩ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলে অবসর নিয়েছিলেন শচীন। সেই ম্যাচ শেষে একটি বিদায়ী ভাষণও দিয়েছিলেন তিনি। সে দিনের কথা এখনও মনে পড়ে শচীনের। তার জন্য মাঠেই বিশেষ বন্দোবস্ত করেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। সে কথা জানিয়েছেন শচীন। তিনি বলেন, ‘ওই মুহূর্ত জীবনে একবারই আসে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ধোনি বলল, আমার জন্য ওরা কিছু ব্যবস্থা করছে। তার পরে দেখলাম, মাঠেই আমাকে ঘিরে উল্লাস হল। আমাকে গার্ড অফ অনার দিল। বুঝতে পারছিলাম, এটাই শেষ বার। এর পরে আর দেশের হয়ে নামা হবে না। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না।’
ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ক্রিকেটের বাইরে যাননি শচীন। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টর তিনি। লেজেন্ডস লিগেও খেলতে দেখা যায় তাঁকে। অবসর নিলেও যে তিনি খেলাকে ছাড়তে পারেননি তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন ১০০টি শতরানের মালিক।