রংপুর প্রতিনিধি:
দেশে বেকারত্ব মহামারি নিরসনে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে ৭ দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে ‘দয়া নয় কর্ম চাই, বাচার মতো বাঁচতে চাই’ স্লোগানে এ কর্মসূচি পালন করে যুব অধিকার পরিষদের রংপুর জেলা ও মহানগর শাখা।
সেখানে যুব নেতারা বলেন, দেশে দিন দিন বেকারত্ব মহামারি আকার ধারণ করছে। চাকরি প্রত্যাশীর তুলনায় কর্মসংস্থান কম। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় নিয়োগের কারণে মেধারীরা পিছিয়ে পড়েছেন। সব ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রহসনের কারণে সত্যিকারের মেধাবী তরুণরা চাকরির প্রতিযোগিতায় ছিটকে পড়ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে মেধা পাচার বাড়ার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা ও চাকরি ক্ষেত্রে আস্থাহীনতা প্রকট আকার ধারণ করবে। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে আমাদের দাবি, তরুণদের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সমাবেশে মহানগর যুব অধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাদের আনসারি শিমুলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন- রংপুর জেলা গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেরে খোদা আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আশিকুর রহমান আশিক, জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান পলাশ প্রমুখ।
এ সময় বেকারত্ব নিরসনে যুব অধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
১. সকল ধরনের বৈষম্যমুক্ত চাকরি ও কর্মসংস্থানকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
২. শিক্ষার সব স্তরে চাহিদাভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) বিভাগে তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. সব চাকরিতে আবেদন ফি, অবৈধ সুপারিশ, যে কোনো জামানত ও বয়সসীমা মুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘুষ ও দুর্নীতির মতো অসদুপায়ে নিয়োগের সব প্রক্রিয়া বন্ধ এবং সরকারি ও বেসরকারি চাকরির বৈষম্য অবসান ঘটাতে হবে।
৪. স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণকেন্দ্র তৈরি এবং স্থানীয় উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। তরুণদের সম্পৃক্ত করে দেশের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।
৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সনদ জামানতে সুদবিহীন ঋণ প্রদান, শিক্ষিত ও শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ঝড়ে পড়াদের এই আওতায় আত্মকর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দেশের মোট ঋণ প্রদানের ৫০ শতাংশ দিতে হবে। কর্ম ও ঋণ আওতার বাইরে সব তরুণদের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেকার ভাতা দিতে হবে।
৬. দেশের সব প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে শতভাগ চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে হবে। চাকরি ও কর্মসংস্থানের আওতার বাইরে থাকাদের উপযুক্ত পরিমাণ ভাতা দিতে হবে।
৭. বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিতদের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বা সুদমুক্ত ঋণসুবিধার আওতায় বিদেশে পাঠাতে হবে। বিদেশে তরুণদের জন্য যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে অবাধ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তাদের দেশে অবস্থানরত পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করতে হবে। প্রবাস গমনে তৃতীয় পক্ষের দৌরাত্ম্য অবসান, প্রবাসে সব চিকিৎসা, দেশের দূতাবাসগুলো প্রবাসীবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। প্রবাসীদের প্রবাসে থাকা অবস্থায় সব জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশ পাঠানোর প্রতিটি স্তরে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক (ভিআইপি) মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রংপুর নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। কর্মসূচিতে রংপুর জেলা ও মহানগর যুব অধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন।