বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মঞ্চে রফিকুল ইসলাম মাদানী

প্রকাশিত: ২:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানী আজ রোববার দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়াতে আসেন। এখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই ভাই ভাই। বাংলার জমিনে হযরত শাহজালালের জমিনে ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নেই। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ঠাঁই নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে রফিকুল ইসলাম মাদানী বলেন, কোনোভাবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করবেন না। এই দেশটাকে বাঁচাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা শহীদ ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আনন্দের মধ্যে, ছ্যালছালাইয়া ক্ষমতায় আসেননি। কোনো অবস্থায়ই আওয়ামী লীগ ও ভারতের প্রতি দরদ দেখাবেন না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।

এর আগে গতকাল রাত ৮টার দিকে শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আজ রোববার রাজধানীর জিরো পয়েন্টে গণজমায়েত কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ‘পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে’ দুপুর ১২টায় গণজমায়েত করবে তারা। এর কয়েক ঘণ্টা আগে আওয়ামী লীগ শহীদ নূর হোসেন স্মরণ ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আজ বিকেল ৩টায় জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এদিকে গতকাল রাত ১১টার পর থেকে জিরো পয়েন্টে (শহীদ নূর হোসেন চত্বর) জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি রুখে দিতে তারা অবস্থান নেন সেখানে। রাত সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শতাধিক মানুষ সমবেত হয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধ স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ তাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। পরে বিক্ষোভকারীরা অদূরে মুক্তিযোদ্ধা অফিসের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন। বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে সেখানে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অডিও ক্লিপে দলের নেতাকর্মীর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ছবি ও সে দেশের পতাকা ব্যবহার করে অবৈধ মিছিল সমাবেশের নির্দেশনা দেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাতে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে কুচক্রী মহলের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় উস্কানিমূলক পোস্টার, ছবিসহ প্ল্যাকার্ড জব্দ করা হয়।

আওয়ামী লীগ জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণার পর গতকাল শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, গণহত্যাকারী বা নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সজীব ভূঁইয়া তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও। তিনি গতকাল ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশ নিয়ে কেউ সমাবেশ ও মিছিল করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মোকাবিলা করা হবে। আওয়ামী লীগ একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই দলের বাংলাদেশে বিক্ষোভ করার কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্র্বতী সরকার কোনো সহিংসতা বা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গের কোনো প্রচেষ্টাকে বরদাশত করবে না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সমকালকে বলেন, অনুমতি ছাড়া কোনো সংগঠন কোনো ধরনের সমাবেশ বা আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টা করলে তা কঠোর হাতে দমন করবে পুলিশ। সেই সঙ্গে ঢাকা শহরের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন চলাকালে জিরো পয়েন্ট এলাকায় (পরে নামকরণ হয় শহীদ নূর হোসেন চত্বর) পুলিশের গুলিতে শহীদ হন যুবলীগ নেতা নূর হোসেন। বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক ও স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে বিক্ষোভ করার সময় পুলিশ তাঁকে গুলি করে। এর পর থেকে ‘শহীদ নূর হোসেন দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ‘গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবেও দিনটি পালিত হয়।

এ উপলক্ষে বিভিন্ন দল কর্মসূচি নিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ আজ সকাল সাড়ে ৮টায় নূর হোসেন চত্বরে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সকাল ৮টায় শহীদ নূর হোসেন চত্বরে এবং পরে পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শহীদ সৈয়দ আমিনুল হুদা টিটোর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মৃতিচারণ করবে।