সেলিনা আক্তারঃ
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি সামান্য কমেছে। তবে সুদের হার ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার সুবাদে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ফেব্রুয়ারি মাসে মোট আমানত ১৬ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণে আমানতে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অন্যতম কারণ হচ্ছে সম্প্রতি আমানতের সুদহার বাড়ানো। এতে সঞ্চয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহিত হচ্ছে।এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানতের জন্য অর্থও বেশি পাওয়া।
আমানতের প্রবৃদ্ধি টানা তিন মাস ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ১১ দশমিক ০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে করোনা মহামারির বৈশ্বিক লকডাউন ও সে কারণে হওয়া অর্থনৈতিক গতি মন্থরতার প্রভাবে আমানত প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল।
আর্থিক অবস্থা ভালো-খারাপ যেমনই হোক, সব ব্যাংকই আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠিত আমানতে ব্যাংকগুলো ৯-১০ শতাংশ সুদহার দিলেও খারাপ অবস্থায় থাকা কিছু ব্যাংক আমানত টানতে ১২ শতাংশ পর্যন্ত চড়া সুদহার দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করার ফলেও ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার কিছুটা বেড়েছে। ব্যাংকাররা বলছেন, সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার ফলে ব্যাংকগুলো আমানতে বেশি সুদ দিতে পারছে। এতে সঞ্চয়কারীরা ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন।
ব্যাংকাররা জানান, একটা সময় সুদের হার অনেক কম ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি হয়তো ঠিক ছিল। তবে এখন সুদের হার বাজারভিত্তিক করার কারণে মানুষজন ব্যাংকে টাকা জমা করতে আগ্রহী হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বেশি সুদ দিতে পারছে। ফলে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। আমানতের প্রবৃদ্ধিতে সুদের হারের পাশাপাশি রেমিট্যান্স আয় বাড়ার ভূমিকা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক ধারা থাকলে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভার পড়ে। কারণ রেমিট্যান্সের একটা অংশ সঞ্চয়ে যুক্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলোও আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে বলেও জানান ব্যাংকাররা।
আমানত বাড়ার প্রভাব পড়েছে মানুষের হাতে থাকা টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দেশের মানুষের হাতে প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকা ছিল। জানুয়ারি মাসের তুলনায় এর পরিমাণ কিছুটা কম। ব্যাংকাররা জানান, জনগণের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে এলে সেটি নতুন আমানত ও ঋণ তৈরির গতি বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা কমার অন্য আরেকটি মানে হলো সেগুলো ব্যাংকে ফিরে এসেছে এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করেছে।