ভরা মৌসুমেও দেখা নেই ইলিশের, অর্ধেক বেলা গড়াতেই জনশূন্য আড়ত

প্রকাশিত: ৩:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪

চাঁদপুর প্রতিনিধি:

‘ইলিশের বাড়ি’ নামে খ্যাত চাঁদপুরে সরবরাহ কমেছে ইলিশের। নদীতে ডুবুচর, দূষণসহ নানা কারণে আগের মত ইলিশ পাচ্ছে না জেলেরা। যে কারণে জেলে ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
মৌসুমের এই সময়ে স্থানীয় ও সরবরাহকৃত ইলিশে আড়তগুলো থাকতো সরগরম। কিন্তু এখনকার চিত্র ভিন্ন। চড়া দাম হওয়ায় ইলিশ কিনতে পারছেন না অনেকে। তবে ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়ার কথা জানালেন মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের নোয়াখালী হাতিয়া থেকে আসা ইলিশ আড়তগুলোতে উঠানো হচ্ছে। তবে সরবরাহকৃত মাছের চাইতে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা বেশি। যে পরিমাণ ইলিশ আড়তে আসছে, তা আবার অল্প সময়ের মধ্যে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বিক্রি শেষ হচ্ছে পাইকারি ইলিশ।

একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, স্বাদে গন্ধে অতুলীয় চাঁদপুরের রুপালী ইলিশ। এর চাহিদা রয়েছে দেশ ও বিশ্বজুড়ে। যে কারণে দেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদপুর মাছঘাটে ছুটে আসে খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা। তবে দাম চড়া হওয়ার কারণে ইলিশ এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে। সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে মাছঘাট এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসে। কিন্তু ইলিশের দাম চড়া হওয়ার কারণে ক্রয় করতে পারছে না। বিগত বছরগুলোতে মৌসুমের এ সময়ে ইলিশের আমদানি ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার মণ। আর এখন সরবরাহ হচ্ছে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মন।
জেলার মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচর চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৪৪ হাজার জেলে ইলিশ আহরণের সাথে জড়িত। নদীতে নামলেও তারা আর আগের মত ইলিশ পাচ্ছে না। ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে জেলে ও ব্যবসায়ীরা কারেন্টজাল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার বিষয়ে দাবী জানাচ্ছেন।

মেসার্স ভাই ভাই আড়তের দেলোয়ার হোসেন বেপারী বলেন, আজকের বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ১৬শ’ টাকা, ১ কেজি ওজনের বেশি ইলিশ প্রতিকেজি ১৮শ’ টাকা। আর ছোট সাইজের ইলিশ প্রতিকেজি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। ইলিশ ছাড়াও অন্যান্য দেশিয় প্রজাতির মাছ আড়তে বিক্রি হচ্ছে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবদুল বারী জমাদার মানিক বলেন, বিগত কয়েক বছর ইলিশের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছে। তবে এ বছর আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে। নদীতে নাব্যতা সংকট, চর জেগে উঠা, মাছের খাদ্যের অভাব এসব কারণে আগের মত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সাগর মোহনায় অসংখ্য ডুবুচর জেগে উঠেছে। এগুলো সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদি হাসান বলেন, ইলিশ পরিভ্রমনশীল মাছ। এগুলো অধিকাংশ সময় সাগরেই থাকে। প্রজননের সময় নদীতে আসে। নানা কারণে নদীতে ইলিশ বিচরণের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তারপরেও জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ নিয়মিত কাজ করছে।

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাওসার দিদার বলেন, বর্তমানে আমরা নদী, আবহাওয়া ও পরিবেশের যে অবস্থা দেখছি তাতে ইলিশের প্রাপ্যতা বাড়বে। জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। এ মাসের শেষের দিকে ইলিশ পাওয়া যাবে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইলিশের বিচরণ থাকবে পদ্মা-মেঘনায়। কারণ এ সময় ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে উঠে আসবে।