ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, সংকটে জেলেরা

প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

ভোলা প্রতিনিধি:

আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র ইলিশের ভরা মৌসুম। অথচ এ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। তাই মাছঘাটগুলোতে নেই তেমন হাঁকডাক। মাছ শিকার করতে না পেরে ঋণগ্রস্ত জেলেরা পড়েছেন মহা সংকটে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কথা হয় ভোলা সদরের তুলাতলী এলাকার মজনু মাঝি ও ছালাউদ্দিন মাঝির সঙ্গে। তারা জানান, নদীতে মাছ ধরতে যেতে যে খরচ হতো তার সিকি ভাগ টাকার মাছও পাওয়া যেত না। আশা নিয়ে বারবার নদীতে নামলেও মিলছে না মাছ। গত তিন মাসে শুধু দেনা বেড়েছে।
মাছ শিকার করতে না পেরে জীবনযাপন নিয়ে চরম সংকটের কথা উল্লেখ করে জলিল মাঝি নামে আরেক মৎস্যজীবী জানান, আড়তদার, মুদি দোকানি, ডিজেল ব্যবসায়ীরা পাওনা পরিশোধের জন্য বেশি চাপ দিলে কী করবেন সেটা ভেবে তিনি দিশেহারা। স্থানীয় এক আড়তদারের কাছে দাদন নিয়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার কিনেছিলেন।

গত ২০ জুলাই স্থানীয় বাজার থেকে ডিজেল ও চাল-ডাল ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিয়ে সাত জন জেলেসহ সাগর মোহনার হাতিয়া এলাকায় ইলিশ শিকারে যান। ২১ জুলাই ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলার ডুবে যায় এবং তার সঙ্গে থাকা এক জেলে মারা যান। তিনি অন্য জেলেদের সহযোগিতায় এলাকায় ফিরেছেন। এখন একেবারেই নিঃস্ব। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপাচাপি করলে এলাকা থেকে পালানো ছাড়া কোনো পথ থাকবে না তার।

তুলাতলীর মাকসুদ মাঝি জানান, গত কয়েক সপ্তাহে নদীতে কিছু মাছ পাওয়া যাচ্ছে। মাছের সাইজ ৬ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি। ৮০০- ৯০০ গ্রামের ওজনের মাছ খুব কম। তিনি ৭ হাজার টাকা খরচ করে ৯ হাজার টাকার মাছ পেয়েছেন।

মাছ কমে যাওয়ার বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, সাগর মোহনার পরে ভোলার চরফ্যাশন থেকে উত্তরে অনেক ডুবোচর। সেখানে পানির গভীরতা কম। ইলিশ গভীর পানির মাছ। অনেক সময় ডুবোচরের কারণে সামনে এগোতে চায় না, তাই মেঘনার শাহবাজপুর চ্যানেলে ইলিশ কম পাওয়া যায়।

জানা গেছে, ভোলা জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৪০ জন। তবে বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি। মৎস্য আড়তদার আবু তাহের, জামাল কোম্পানি, জামাল ব্যাপারী, ইউনুছ বেপারী জানান, জেলার অন্তত এক লাখ জেলের কাছে আড়তদারদের ১০ হাজার কোটি টাকা দাদন দেওয়া আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা আছে কোটি কোটি টাকা। নদীতে মাছ না পাওয়ায় এ বিপুল অঙ্কের টাকা আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
এদিকে ভোলার বাজারে গ্রেড ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা করে। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকায়। জাটকা ইলিশের কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এ মাছগুলো দু’মাস আগে জন্ম নেওয়া। সাগর থেকে মা ইলিশের সঙ্গে নদীতে চলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ভোলার সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা নাজমুস সালেহীন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, দেশে মোট আহরিত ইলিশের ৩০ শতাংশই পাওয়া যায় ভোলার নদী থেকে। চলতি মৌষুমে এ জেলায় ইলিশ আহরনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৯১ হাজার টন। এর মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৩৮ হাজার টন ইলিশ।